অন্যান্য সাহিত্যিককাব্য ও কবিতা

বুদ্ধদেব বসু – আধুনিক কবি

আধুনিক কবি বুদ্ধদেব বসু  বিশ শতকের এক শক্তিমান কবি। তিনি একাধারে কবি, নাট্যকার, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক। সম্পাদনা করেছেন সাহিত্য পত্রিকা ‘প্রগতি’রও। আমাদের এই পোস্টে সেই বিখ্যাত কবি সম্পর্কে নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

জন্ম ও বংশ পরিচয়

১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন বুদ্ধদেব বসু। এই কুমিল্লা ছিল কবির মাতামহ চিন্তাহরণ সিংহের বাড়ি। তাঁর পিতা ভূদেব বসু ছিলেন পেশায় উকিল। কবির মায়ের নাম বিনয়কুমারী বসু। কবির জন্মের পরপরই তাঁর মা মারা যান। পিতাও সন্ন্যাস নিয়ে গৃহত্যাগ করেন। ফলে পিতা-মাতাহীন কবি মাতামহ-মাতামহীর নিকট বড় হতে থাকেন।

শিক্ষাজীবন

১৯১৮ সালে গোপালগঞ্জের সচ্চিদানন্দ শিক্ষানিকেতনে পড়াশোনা করে তিন বছর পর কবি চলে আসেন ঢাকায়। ১৯২৫ সালে ঢাকা কলিজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাশ করেন। এরপর ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে আই.এ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ পাশ করেন।

কর্মজীবন

কবি বুদ্ধদেব বসু তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন। পরে কলকাতার রিপন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। স্টেটস্‌ম্যান পত্রিকায় তিনি সাংবাদিকতাও করেছেন (১৯৪৫ – ১৯৫১ খ্রিঃ)। ১৯৫৬ খ্রিঃ থেকে ১৯৬৩ খ্রিঃ পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেছেন। বাংলা সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ থেকে তিনি সম্পাদনা করেছেন ‘প্রগতি’, ‘কবিতা’ পত্রিকার।

পুরস্কার

  • ১৯৬৭ খ্রি: তিনি ‘তপস্বী তরঙ্গিনী’ লিখে আকাদেমি পুরস্কার পান।
  • ১৯৭০ খ্রি: তিনি পদ্মভূষণ পান।
  • ১৯৭৪ খ্রিঃ রবীন্দ্র পুরস্কার (স্বাগত বিদায়)

মৃত্যু

১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ ই মার্চ

কাব্যগ্রন্থ 

মর্মবাণী (১৯২৫) বন্দির বন্দনা (১৯৩০)  একটি কথা (১৯৩২)  পৃথিবীর পথে (১৯৩৩)  কঙ্কাবতী (১৯৩৭) আমি চঞ্চল হে (১৯৩৭) পরিক্রমা (১৯৩৮) নতুন পাতা (১৯৪০) এক পয়সার একটি (১৯৪২) দময়ন্তী (১৯৪৩) রূপান্তর (১৯৪৪) দ্রৌপদীর শাড়ি (১৮৪৮) শীতের প্রার্থনা : বসন্তের উত্তর (১৯৫৫) যে আঁধার আলোর অধিক (১৯৫৮) মরচে পড়া পেরেকের গান (১৯৬৬) একদিন : চিরদিন (১৯৭১) স্বাগত বিদায় (১৯৭১) প্রভৃতি ।

অন্যান্য রচনা

  • উপন্যাস – একদা তুমি প্রিয়ে (১৯৩৩), সাড়া (১৯৩০), লাল মেঘ (১৯৩৪), তিথিডোর (১৯৪৯), নির্জন স্বাক্ষর (১৯৫১), মৌলিনাথ (১৯৫২), রাত ভ’র বৃষ্টি (১৯৬৭), রুক্‌মি (১৯৭২)
  • নাটক – তপস্বী ও তরঙ্গিনী (১৯৬৬), প্রথম পার্থ (১৯৭০), সত্যসন্ধ (১৯৬৮), কলকাতার ইলেক্ট্রা
  • স্মৃতিকথামূলক – আমার ছেলেবেলা (১৯৭৩), আমার যৌবন (১৯৭৬)
  • অনুবাদ – মেঘদূত (১৯৫৭) শার্ল বোদলেয়ার : তাঁর কবিতা (১৯৬১)  হোন্ডার্লিনের কবিতা (১৯৬৭) প্রভৃতি।
  • কবিতা সঙ্কলন গ্রন্থ – আধুনিক বাংলা কবিতা

শেষ কথা

বস্তুত শুধু নিজে অজস্র রূপ ও রীতির কবিতা লিখেই নয়, সহযাত্রী এবং উত্তরসূরি আধুনিক কবি সমাজকে কবি মর্যাদায় সমুন্নীত করে কবিতা সম্পাদক বুদ্ধদেব বসু একালের বাংলা কাব্যের ইতিহাসে অমর হয়ে রইলেন।

— জগদীশ ভট্টাচার্য