শব্দার্থতত্ত্ব

শব্দার্থতত্ত্ব – কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

শব্দার্থতত্ত্বের একমাত্র আলোচ্য বিষয় মানবভাষায় ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দের অর্থ এবং তার কার্যক্রিয়া। ‘শব্দার্থ’ বলতে আমরা বুঝি এক শব্দের সঙ্গে আর এক শব্দের বা শব্দগুচ্ছের সম্পর্ক। শব্দার্থতত্ত্ব – কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শীর্ষক এই পোস্টে শব্দার্থতত্ত্বের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

শব্দার্থতত্ত্বের দুইটি শাখা হল- ১.উপাদানমূলক তত্ত্ব এবং ২.সত্যসাপেক্ষ তত্ত্ব।
শব্দার্থের উপাদানমূলক বিশ্লেষণের মূল ধারণাটি হল,একটি বস্তুকে যেমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ ভেঙে তার অনু-পরমাণু বিশ্লেষণ করলে বস্তুটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়;তেমনি শব্দার্থকে ভেঙে তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশকে বিশ্লেষণ করলে সেই ধারণা পাওয়া সম্ভব। সত্যসাপেক্ষ তত্ত্বের মূল বিষয় হল সাধারণ ভাষার অর্থকে তার সত্যতায় পরিবর্তিত করা।

একটি শব্দ একটিমাত্র অর্থে ব্যবহৃত না হয়ে অন্য কিছু অর্থেও ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন –

১.সবুজ মানেই তারুণ্য (ইঙ্গিত অর্থে)।
২.খেলায় জেতা মানেই আনন্দ(কার্যকারণ অর্থে)।
৩.বেঁচে থাকার অর্থ কি আত্মসুখ?(দার্শনিকতা অর্থে)।

দুইটি প্রধান অংশে শব্দার্থকে ভাগ করা যায় – সাধারণ অর্থ এবং নিদর্শন।
অভিধানে একই শব্দের অর্থ নানা প্রতিশব্দের বা শব্দগুচ্ছের মাধ্যমে দেওয়া থাকে এবং তাকেই অনেক ভাষাবিজ্ঞানী প্রকৃত অর্থ বলে মনে করেন।এক্ষেত্রে ‘অর্থ’ বলতে এক শব্দের সঙ্গে এক বা একাধিক শব্দের সম্পর্ককে বোঝায়।যেমন – কুকুর=সারমেয়, চতুষ্পদী প্রাণীবিশেষ।

এছাড়া একটি শব্দ এবং সেটি যে বস্তুকে নির্দেশ করে তাদের মধ্যেকার সম্পর্ককে নিদর্শন বলে।এই নিদর্শনও শব্দার্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।তবে অনেক শব্দের অর্থ আছে কিন্তু নিদর্শন নেই।যেমন- ‘যদি’,’অনুভব’ ইত্যাদি।

শব্দার্থতত্ত্ব থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর 

১.’থিসরাস’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী?
উ: রত্নাগার।
২.শব্দের অর্থ কে সৃষ্টি করে?
উ: শব্দের উপাদানগুলি।
৩.একজন বিদেশি থিসরাস প্রণেতার নাম-
উ: পিটার মার্ক রজেট।
৪.’শব্দার্থের রূপান্তর’ অন্য কী নামে পরিচিত?
উ: অর্থসংক্রম।
৫.শব্দার্থের প্রথম অর্থ কী?
উ: সাধারণ অর্থ।
৬.’ঊর্ণনাভ’ শব্দের প্রতিশব্দ হল–
উ: মর্কট।
৭.কালের পরিবর্তনের সঙ্গে বদলায়—
উ: শব্দার্থ।
৮.’থিসরাস’ শব্দটির মূলে রয়েছে—
উ: গ্রিক শব্দ।
৯.’মার্জার’ শব্দটি কোন শব্দের প্রতিরূপ?
উ: বিড়াল।
১০.শব্দার্থের দ্বিতীয় অর্থ কী?
উ: নিদর্শন।

অর্থ পরিবর্তনের বা শব্দার্থ পরিবর্তনের প্রধান তিনটি ধারা হল

১.শব্দার্থের প্রসার বা বিস্তার
২.শব্দার্থের সংকোচ
৩.শব্দার্থের রূপান্তর

১.শব্দার্থের প্রসার: – শব্দ যখন তার মূল বা আদি অর্থকে অতিক্রম করে প্রসারিত অর্থে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে শব্দার্থের প্রসার বলে।যেমন –
সাগর > সগর বংশীয় > সমুদ্র
স্বত্ব > নিজস্বতা > মালিকানা ইত্যাদি।

২.অর্থের বা শব্দার্থের সংকোচ: – শব্দার্থ পরিবর্তনের ধারায় কোনো শব্দের বৃহত্তর অর্থের মধ্যে যদি কোনো একটি অংশকে গ্রহণ করা হয়,তখন তাকে শব্দার্থের সংকোচ বলে।যেমন –
ঘাস > খাদ্য > তৃণ,
অন্ন >যা খাওয়া হয় >ভাত,
জলদ > জলদাতা > মেঘ ইত্যাদি।

৩.শব্দার্থের রূপান্তর: – অর্থের প্রসার,সংকোচ ও সংমিশ্রণের ফলে যদি কোনো শব্দ মূল অর্থ পরিত্যাগ করে একটি নতুন অর্থ গ্রহণ করে তবে তাকে শব্দার্থের রূপান্তর বলে। যেমন –
বুজরুক > সম্মানিত ব্যক্তি > ভণ্ড,
কৃপণ > কৃপার পাত্র > ব্যয়কুণ্ঠ,
গবেষণা > গোরু খোঁজা > বিশেষ বিষয়ে নিয়মানুগ বিশ্লেষণ।

লেখকঃ কুতুব আলি, টার্গেট  বাংলা