পাঁচমিশালী

Interview বাংলা বিষয় – বিভিন্ন প্রকল্প

Interview for SLST – বাংলা বা অন্যান্য বিষয়ের ইন্টারভিউ এর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয়ে প্রচলিত বিভিন্ন প্রকল্পগুলির সম্পর্কে জানা – যেমন কন্যাশ্রী, মিড ডে মিল। আমাদের এই আলোচনায় বিদ্যালয়ে প্রচলিত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্প সম্বন্ধে যথাসম্ভব বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যায়, পরীক্ষার্থীরা তাদের Interview এর প্রয়োজনীয় তথ্য এখান থেকে পাবেন।

মিড ডে মিল

শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করে তুলতে এবং তাদের শরীরের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করতে কেন্দ্র সরকার থেকে এই প্রকল্পের সূচনা করে। ১৯৯৫ খ্রিঃ ১৫ই আগষ্ট এই প্রকল্পের সূচনা হয়। যদিও তা কার্যকর করা হয় ১৯৯৭ খ্রিঃ। ২০১০ সালে সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের অধীনে শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার সময়েও এই মিড ডে মিলের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ৬ বছর থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুরা এই প্রকল্পের আওতায় পড়ে। প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত শিশুদের যাতে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করা হয় সেদিকে জোর দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ খ্রিঃ ৩০ শে সেপ্টেম্বর মিড ডে মিলকে পড়ুয়ার অধিকার বলে স্বীকৃতি দেয় কেন্দ্র সরকার।

সর্বশিক্ষা অভিযান

৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী সমস্ত শিশুদের আবশ্যিক শিক্ষাদানের লক্ষ্যে ২০০০ খ্রিঃ কেন্দ্রীয় সরকার সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পের সূচনা করে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য দেশের সমস্ত শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা। তাদের শিক্ষা নিশ্চিত করা। ২০০৭ সালের মধ্যে সমস্ত শিশু যাতে ৫ বছর ব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা পেতে পারে তার সুব্যবস্থা করা। এবং ২০১০ সালের মধ্যে সমস্ত শিশুর ৮ বছর ব্যাপী নূন্যতম আবশ্যিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এই প্রকল্পের মূল কথা – ‘Education for all’ বা ‘সবার জন্য শিক্ষা’।

RMSA বা রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান

দেশে শিক্ষার মানকে আরো উন্নত করার লক্ষ্যে ২০০৯ খ্রিঃ RMSA চালু করা হয়, যার পুরো কথা রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান। এই প্রকল্পে বলা হয়, নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় গঠন করতে হবে। ৫ বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। শিক্ষার পথে অন্তরায় হিসেবে লিঙ্গ, সামাজিক বা অর্থনৈতিক বাধা দূর করতে হবে। ২০২০ সালের মধ্যে সার্বজনীন ভাবে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

মডেল বিদ্যালয় প্রকল্প

২০০৮ খ্রিঃর নভেম্বরে এই প্রকল্পের সূচনা হয়। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য গ্রামের প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের যথাযথ মানের শিক্ষা প্রদান করা। এই প্রকল্পে বলা হয়েছে, সঠিকভাবে কাজ করার জন্য দেশের প্রতিটি ব্লকে উপযুক্ত মানের বিদ্যালয় গঠন করতে হবে। সেই সমস্ত বিদ্যালয়ে থাকবে উন্নতমানের পরিকাঠামো। পাঠ্যক্রম এবং মূল্যায়ন ব্যবস্থায় আধুনিকতা আনতে হবে। বিদ্যালয় পরিচালনা থেকে পড়াশোনার মানে তা হবে একটি মডেল।

কন্যাশ্রী প্রকল্প

কন্যাশ্রী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব প্রকল্প। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের সূচনা করা হয়। কন্যাসন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষাদান, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই প্রকল্পের সূচনা। এই প্রকল্পের সুবিধা পায় ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েরা। প্রধান শর্ত ছাত্রীটিকে অবশ্যই অবিবাহিতা হতে হবে। সেই সঙ্গে ছাত্রীটির নিজের নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।

কন্যাশ্রী মূলত দুইভাবে আবেদন করা যায়। ১৮ বছরের নীচে ছাত্রীরা K1 এর আবেদন করবে। এই আবেদনের ভিত্তিতে ছাত্রীটি বার্ষিক ৭৫০ টাকা পাবে। অন্যদিকে ১৮ বছর বা তদুর্দ্ধ ছাত্রীরা K2 এর জন্য আবেদন করতে পারবে যার অর্থমূল্য এককালীন ২৫ হাজার টাকা। যদি কোনো ছাত্রী এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তাহলেও সে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাবে পোর্টালের ট্রান্সফার অপ্সনের মাধ্যমে। তবে এর জন্য যা কিছু তা করবে বিদ্যালয়। প্রকল্পের শ্লোগান – ‘আমি প্রগতি, আমি কন্যাশ্রী’। এই প্রকল্পের জন্য যে লোগো তা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টি। বলা বাহুল্য কন্যাশ্রী প্রকল্পটি দেশে বিদেশে বহু প্রশংশিত হয়েছে। বিভিন্ন পুরষ্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইউনাইটেড নেশনস কর্তৃক WSIS 2016।

২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট থেকে প্রতি বছর ঐ দিনটিকে কন্যাশ্রী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

সবুজ সাথী প্রকল্প

এই প্রকল্পটিও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব প্রকল্প। ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে আসতে যাতে কোনো সমস্যায় না পড়ে সেজন্য তাদের সাইকেল দেবার লক্ষ্য নিয়ে এই প্রকল্পের ঘোষণা করেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৯ শে অক্টোবর ২০১৫। নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা এই প্রকল্পের আওতাধীন। কন্যাশ্রী প্রকল্পের মতো একটি ওয়েব বেসড পোর্টালের মধ্য দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ডেটা এন্ট্রি করতে হয়। তারপর তা বিদ্যালয় স্তর থেকে ই-ফরোয়ার্ড করা হয় ব্লক স্তরে। ক্রমশ রাজ্যস্তরে পৌঁছয় সেই ডেটা। সব কিছু ঠিক থাকলে বিদ্যালয়ের তালিকা অনুসারে দেওয়া হয় সাইকেল। গড়পরতা একটি সাইকেলের জন্য অর্থ বরাদ্ধ করা হয়েছে ৩২০০ টাকা। TI, HERO এবং AVON কোম্পানীকে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে সাইকেল তৈরীর বরাত দেওয়া হয়। প্রকল্পের লোগোটি তৈরী করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বিদ্যালয় স্তরে Drop out সংখ্যা কমানো তথা বিদ্যালয়-ছুট ছাত্রছাত্রীদের পুনরায় বিদ্যালয়মুখী করে তোলা।

মিশন নির্মল বাংলা

পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চল থেকে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ চিরতরে নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয় মিশন নির্মল বাংলা অভিযানের। লক্ষ্য পুরোপুরি স্বচ্ছ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এরজন্য ১০০ শতাংশ শৌচাগার ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়। এরকম পরিকল্পনা নেওয়া হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা রাস্তার নির্দিষ্ট দূরত্বের ব্যবধানে শৌচাগার নির্মাণ করা হবে। মূলত চেতনার প্রসার, নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস তৈরী করে বাংলা নির্মল হিসেবে গড়ে তোলাই এই মিশনের লক্ষ্য। প্রকল্পটির সূচনা করেন পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় – ২০১৫ সালের ৩০ শে এপ্রিল, নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। পরবর্তীকালে এই ‘নির্মল বাংলা’ প্রকল্পকে কেন্দ্র সরকার ‘রোল মডেল’ হিসেবে গ্রহণ করেছে। প্রসঙ্গত আরো একটি তথ্য মনে রাখতে হবে, সারা দেশে নদীয়া জেলা ‘প্রথম মুক্ত শৌচহীন’ জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে উত্তর চব্বিশ পরগণা। তৃতীয় ও চতুর্থ যথাক্রমে – হুগলী ও বর্ধমান।

যুবশ্রী প্রকল্প

রাজ্যের বেকার যুবকদের আর্থিক সাহায্যের জন্য এই প্রকল্পের সূচনা করা হয়। ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর এই প্রকল্পের ঘোষণা করেন পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘোষণা অনুসারে রাজ্যের বেকার যুবকদের জন্য মাসিক ১৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

শিক্ষাশ্রী প্রকল্প

বিদ্যালয়ে উচ্চপ্রাথমিক স্তরে তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের পড়াশোনায় আর্থিক সাহায্যের উদ্দেশ্যে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের সূচনা করা হয়। সূচনায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রক। কন্যাশ্রী, যুবশ্রী প্রকল্পের পর এই শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের ঘোষণা করেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় – ২০১৪ সালের ৩০ শে জুন। যেসমস্ত তপসিলি জাতি বা উপজাতির ছেলেমেয়েরা সরকারি অথবা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং যাদের পারিবারিক বার্ষিক আয় আড়াই লক্ষ টাকার কম তারাই এই প্রকল্পের আওতায় আসবে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা কেন্দ্রীয় সরকারের স্কলারশিপ পায় বলে তাদের এই প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে।

সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে নিরাপদ যাত্রার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৬ সালে সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ প্রকল্পের সূচনা। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য পথ দুর্ঘটনা রোধ করা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে কিছু নির্দেশিকা দেওয়া হয়। যেমন – বাইক চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহার করা কিংবা গাড়ি চালানোর সময় সিট বেল্টের ব্যবহার করা। একটি নির্দিষ্ট গতিবেগের মধ্যে গাড়ি চালানো এবং অবশ্যই ট্রাফিক নিয়ম মেনে সকলকে চলা। প্রকল্পের প্রচারে যানজট বহুল এলাকায় এবং গাড়ির সামনে বা পেছনে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ শ্লোগানটি লেখা হয়। বিদ্যালয় স্তরে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও এই চেতনা বৃদ্ধির জন্য নানা আলোচনা, অঙ্কন প্রতিযোগিতা করা হয়।

আলোচক – নীলরতন চট্টোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *