উপন্যাস ও ছোটগল্পবাংলা সাহিত্য

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় – নানা তথ্যে

বাংলা উপন্যাস সাহিত্যের ধারায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় -এর (১৮৭৬ খ্রি:, ১৫ ই সেপ্টেম্বর – ১৯৩৭ খ্রি: ১৬ ই জানুয়ারি) নাম বিশেষ ভাবে স্মরণীয়। তাঁর সমকালীন সময়ে ব্রাহ্মণ শাসিত এবং জমিদার শাসিত বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ কেমন ছিলেন তার নিখুঁত বর্ণনা আমরা তার লেখায় খুজে পাই। সমাজের সাধারণ মানুষই তার রচনার নায়ক। তাঁর জীবন অনুসন্ধানী দৃষ্টি আমাদের আকর্ষন করে। গল্পের কাহিনি পাঠককে একাগ্র করে তোলে । নারী চরিত্র নির্মানে তার ভূমিকা স্মরণীয়। প্রেমের বিশ্লেষন, আচার- আচরণের বর্ণনা তার রচনায় সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এখানেই তার বিশেষত্ব।

ক. উপন্যাস 

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত উপন্যস গুলিকে কয়েকটি বিভাগে ভাগ করা হয়। যেমন –

১. সামাজিক উপন্যাস‬ –  বড়দিদি ( ১৯১৩) বিরাজবৌ (১৯১৪) পল্লীসমাজ (১৯১৬) চন্দ্রনাথ ( ১৯১৬) দেবদাস ( ১৯১৭) দত্তা (১৯১৮) বামুনের মেয়ে (১৯২০) দেনাপাওনা (১৯২৩) নববিধান (১৯২৩) বিপ্রদাস (১৯৩৫)

২. আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস‬ –  শ্রীকান্ত – ১ ম পর্ব ( ১৯১৭) শ্রীকান্ত -২য় পর্ব (১৯১৮) শ্রীকান্ত – ৩য় পর্ব ( ১৯২৭) শ্রীকান্ত – ৪ র্থ পর্ব (১৯৩৩)

‪৩. বিতর্কমূলক উপন্যাস‬ –  চরিত্রহীন (১৯১৭) গৃহদাহ (১৯২০) শেষপ্রশ্ন (১৯৩১)

৪. রাজনৈতিক উপন্যাস -‬  পথের দাবী (১৯২৬) প্রভৃতি।

কোন উপন্যাস কোন পত্রিকায় প্রকাশ ? 

  • বিরাজ বৌ — প্রকাশিত হয় ” ভারতবর্ষ ” পত্রিকায়।
  • পল্লীসমাজ – প্রকাশিত হয় “ভারতবর্ষ ” পত্রিকায়।
  • শ্রীকান্ত – প্রকাশিত হয় “ভারতবর্ষ ” পত্রিকায়।
  • শরৎচন্দ্রের অসম্পূর্ণ উপন্যাস হল – শেষের পরিচয়।

উপন্যাস‬ ও তার পটভূমি

  • চন্দ্রনাথ– জমিদার পুত্র চন্দ্রনাথের প্রেম ও বিধবা সমস্যা প্রাধান্য পেয়েছে।
  • পল্লীসমাজ – গ্রামীন সমস্যা, প্রেম প্রাধান্য পেয়েছে ।
  • দেনাপাওনা — জমিদারের শোষণ অত্যাচার, পারিবারিক জীবন প্রাধান্য পেয়েছে।
  • চরিত্রহীন – প্রচলিত সমাজের প্রতি তীব্র শ্লেষ ও বিদ্বেষ এখানে ফুটে উঠেছে ।
  • দেবদাস — প্রেম, বিরহ, পতিতা অনুরক্তি এখানে ফুটে উঠেছে ।
  • দত্তা – হিন্দু ও ব্রাহ্ম সমাজের বিরোধ দেখান হয়েছে।
  • পথের দাবী – লেখকের রাজনৈতিক ইচ্ছা ও ঔপনাসিক দাবী ধরা পড়েছ।
  • শেষপ্রশ্ন – রাজনৈতিক সমস্যা ও অর্থনৈতিক সমস্যা বড়ো করে দেখান হয়েছে। এছাড়াও প্রেম, নারী – পুরুষের সম্পর্ক, ধর্ম সংস্কার প্রভৃতির উপর লেখক প্রশ্ন তুলেছেন।

উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ণ

  • প্রেমাঙ্কুর‬ আতর্থি “দেনাপাওনা” র চলচ্চিত্রে রুপ দেন।
  • প্রমথেশ‬ বড়ুয়া পরিচালিত ” দেবদাস ” বাংলা ও হিন্দিতে মুক্তিলাভ করে ১৯৩৫ এ। এছাড়া তাঁর শ্রীকান্ত, পরিণীতা উপন্যাস নিয়েও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।
  • শরৎচন্দ্রের মৃত্যুর পর প্রকাশিত রচনা হল – শুভদা (১৯৩৯,জুন)।

ছোটগল্প

কথাসাহিত্যিক‬ শরৎচন্দ্রের প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় তার লেখা ছোটোগল্প গুলিতেও। তাঁর বিখ্যাত ছোটোগল্পগুলি হল – বিন্দুর ছেলে (১৯১৪)  মেজদিদি (১৯১৫) স্বামী (১৯১৮) ছবি (১৯২০) হরিলক্ষী (১৯২৬) অনুরাধা (১৯৩৪) সতী (১৯৩৪) পরেশ ( ১৯৩৪) মহেশ (১৯২৩) প্রভৃতি।

প্রবন্ধ‬ – নারীর মূল্য ( ১৯২৩) তরুণের বিদ্রোহ (১৯২৯) স্বদেশ ও সাহিত্য (১৯৩২)

শরৎচন্দ্রের‬ প্রথম অনুবাদ গ্রন্থ হল – বিরাজ বৌ। এটি হিন্দি ভাষায় অনুদিত হয়।

শরৎচন্দ্র‬ “যমুনা ” পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

“কুন্তলীন” পুরস্কার পান “মন্দির ” গল্প লিখে।

শরৎচন্দ্রের‬ লেখা সব থেকে বেশি ভারতীয় ভাষায় অনুদিত হয়। যেমন – হিন্দি, গুজরাটি, মারাঠি, তেলেগু, উর্দু প্রভৃতি।

ইংরাজি‬ ছাড়াও ইটালিয় অনুবাদও দেখা যায়।

পুরষ্কার ও সন্মান

  • কলকাতা‬ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে “জগত্তারিণী সুবর্ণ পদক” সম্মানে সম্মাণিত করে ১৯২৩ খ্রি: ।
  • “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডি.লিট উপাধি লাভ করেন।
  • সাহিত্য‬ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

পথের দাবী‬ উপন্যাসের উপর সরকারী নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয় ১৯২৭ এ।

ছদ্মনাম ও রচনা

শরৎচন্দ্র অনিলা দেবী ছদ্মনামে লেখেন — নারীর মূল্য।

আলোচক – সুকান্ত চ্যাটার্জী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *