ট্রাজেডি – বিশ্বনাট্যসাহিত্যের একটি বিশেষ নাট্য আঙ্গিক। গ্রীক নাট্যসাহিত্য থেকে ইংরেজিতে শেকসপীয়রের রচনায় এই নাট্য আঙ্গিকের নানা রূপান্তর হয়েছে। Tragedy নিয়ে নানা সময় নানা আলোচনাও হয়েছে। হচ্ছেও। বাংলা নাট্যসাহিত্যেও রচিত হয়েছে বেশ কিছু মূল্যবান Tragedy । এই প্রচ্ছদে আমরা Tragedy ও তার বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোকপাত করেছি।
এরিস্টটল তার পোয়েটিক্স গ্রন্থে নাটকের দুটি রীতির কথা বলেছেন-১) Tragedy ২) Comedy। Tragedy র উৎপত্তি গ্রিসে। গ্রীক দেবতা ডায়নোসিসের বসন্তকালীন উৎসব থেকে Tragedy র উৎপত্তি। Tragedy শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক ‘ত্রাগোদিয়া’ শব্দ থেকে। যার মুল অর্থ ছাগলের গান’ (goat song). তাই ট্রাজেডির বুৎপত্তিগত অর্থ – ছাগ গীতি। গ্রীসেই প্রথম Tragedy র উদ্ভব। এর আদি রুপকার হলেন থেসপিস।এর পূর্ণতা লাভ করে এস্কাইলাস, সোফোক্লিস, ইউপিডিস এই ত্রয়ীর সমবেত প্রচেষ্টায়। Tragedy র বাংলা প্রতিশব্দ বিয়োগান্তক রচনা।
Tragedy সম্পর্কে প্রথম আলোচোনা করেন ৩৩০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে এরিস্টটল তাঁর ‘পোয়েটিক্স’ গ্রন্থে।
এই গ্রন্থের পঞ্চম, ষষ্ট, দ্বাদশ, অষ্টাদশ, চতুর্বিংশ, ও ষড়বিংশ অধ্যায়ে।
এরিস্টটল Tragedy র ছয়টি উপাদানের কথা বলেছেন। উপাদান গুলিকে তিনি দুটিভাগে ভাগ করেছেন। যথা-
১)-অন্তরঙ্গ উপাদান-কাহিনী,চরিত্র,অভিপ্রায়।
২)-বহিরাঙ্গ উপাদান-সঙ্গীত,ভাষা, দৃশ্য।
এরিস্টটল Tragedy র চারটি শ্রেনির কথা বলেছেন।যথা-
১) জটিল বা complex
২) কারুন্যবহ বা pathetic
৩) নীতিমুলক -ethical
৪) সরল বা simple
এর মধ্যে তিনি জটিল Tragedy কেই শ্রেষ্ঠ বলেছেন। এরিস্টটল পোয়েটিক্স গ্রন্থের ষষ্ঠ অধ্যায়ে ট্রাজেডির সংজ্ঞা দিয়েছেন।
Tragedy র আদর্শ সংজ্ঞা
আদি-মধ্য-অন্ত সমন্বিত যে গুরুগম্ভীর নাট্য কাহিনীতে কোন অসাধারণ গুণসম্পন্ন নায়কের নিয়তির প্রভাবে বা চরিত্রের অন্তর্নিহিত ক্রুটির জন্য পরাজয় ঘটে, যা দর্শকচিত্তে উদ্রেক করে করুনা ও ভীতি এবং পরিশেষে ক্যথারসিস বা ভাব মোক্ষণ ঘটায় তাকেই ট্রাজেডি বলে।
বৈশিস্ট্য
১) ট্রাজেডির বিষয় হবে গুর গম্ভীর ও তাৎপর্যবাহী।
২) প্লট হবে ষড়ঙ্গ ও পরিমিত আয়াতনের যা আদি মধ্য অন্ত তিন স্তরে বিন্যস্ত।
৩) ট্রাজেডির লক্ষ হবে ভীতি ও করুণার উদ্রেক করে দর্শক মনে করুণ রসের আনন্দ দান করা।
৪) ট্রাজেডির ভাষা হবে ছন্দবদ্ধ।
৫) ট্রাজেডির নায়ক হবে সাধারণ থেকে অনেক উর্ধের মানুষ কিন্ত ভালো ও মন্দের মাঝামাঝি।
নায়কের বৈশিস্ট্য
১) ট্রাজেডির নায়ক হবেন সাধারন থেকে অনেক উর্দ্ধের মানুষ।
২) তিনি অতিশয় ভালো এবং অতিশয় মন্দ কোন্টাই হবেন না।তিনি হবেন ভাল ও মন্দের মাঝামাঝি।
৩) নায়ক হবেন দৈবপীড়িত বা নিয়তিলাঞ্চহিত।
৪) অসম্ভব কর্মতৎপরতা সত্ত্বেও ক্রমশ হেরে যাবেন।
শ্রেণিবিভাগ –
১) গ্রীক ট্রাজেডি- জেসি গুপ্তের কীর্তিবিলাস বাংলা সাহিত্যে এর উদাহরণ।
২) সেনকান বা রোমান ট্রাজেডি – জোতিরিন্দ্রনাথের – পুরুবিক্রম।
৩) রিভেঞ্জ ট্রাজেডি -রবীন্দ্রনাথের – রাজা ও রানী, মালিনী।
৪) শেক্সপীরিয় ট্রাজেডি – দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের- সাজাহান, নুরজাহান, রবীন্দ্রনাথ – বিসর্জন।
৫) ডোমেস্টিক ট্রাজেডি -প্রফুল্ল,।
৬) রেস্টোরেশান- কৃষ্ণকুমারী।
বাংলা সাহিত্যে Tragedy র বিকাশ
বাংলা সাহিত্যের প্রথম Tragedy – জে সি গুপ্তের ‘কীর্তিবিলাস’ (১৮৫২)।
দ্বিতীয় Tragedy -উমেশচন্দ্র এর ‘বিধবা বিবাহ’
প্রথম সার্থক Tragedy – মধুসূদনের ‘কৃষ্ণকুমারী'(১৮৬১)।
এছাড়া উল্লেখযোগ্য Tragedy –
গিরিশ চন্দ্র এর-প্রফুল্ল, বলিদান,
রবীন্দ্রনাথ -বিসর্জন, মালিনী, রাজা ও রানী,
দ্বিজেন্দ্র লাল -নুরজাহান, সাজাহান,চন্দ্রগুপ্ত।
মন্মথরায়- জীবনটাই নাটক, ইত্যাদি।