অন্যান্য সাহিত্যিক

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত – জীবন ও সাহিত্য

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত  বাংলা সাহিত্যের অন্যতম খ্যাতনামা শিল্পী। এই প্রচ্ছদে আমরা তাঁর সম্পর্কে নানা তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলা সাহিত্যানুরাগীদের পছন্দ হলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে

যাঁর লেখা ‘বেদে’ উপন্যাস পড়ে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন – “তোমার কল্পনার প্রশস্ত্রক্ষেত্র ও অজস্র বৈচিত্র্য দেখে অামি মনে মনে তোমার প্রশংসা করেছি” ‘শ্রীনীহারিকা দেবী’  ছদ্মনামে যাঁর সাহিত্যজীবন শুরু, কল্লোল যুগের অন্যতম সাহিত্যিক, তিনি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

বাংলা সাহিত্যে তাঁর অাবির্ভাব ‘প্রবাসী’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে। ১৩২৮ থেকে ১৩২৯পর্যন্ত ”শ্রীনীহারিকা দেবী”ছদ্মনামে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রথম অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের বেশ কয়েকটি কবিতা বের হয়।’ভারতী’ পত্রিকায় স্বনামে ‘প্রতিপদের চাঁদ’ নামে একটি কবিতা প্রথম বের হয় ১৩২৯ সালের চৈত্র সংখ্যায়।

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের জন্ম ১৯০৩খ্রীঃ বাংলাদেশের নোয়াখালিতে। পিতা ছিলেন রামকুমার সেনগুপ্ত অার মাতা হেমলতা দেবী। মূলত অাইনজীবী দাদা জিতেন্দ্র কুমারের উৎসাহে অচিন্ত্যকুমার ইংরেজি তে এম.এ. পাশ করে অাইন পরীক্ষাতেও সসম্মানে উত্তীর্ন হন। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত রামকৃষ্ণ দেব-র একনিষ্ট ভক্ত ছিলেন।

অচিন্ত্যকুমার -র প্রথম কাব্য ‘অমাবস্যা’ প্রথম উপন্যাস ‘বেদে'(১৯২৮) এছাড়া প্রেমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে যুগ্মভাবে ‘বাঁকালেখা’উপন্যাসটি ১৯২২খ্রি:প্রকাশ করেন। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তাঁর ‘কাকজ্যোৎস্না’ উপন্যাসটি স্ত্রী নীহারকণা দেবীকে উৎসর্গ করেন।

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত সাহিত্যকর্মের জন্য নানা সম্মানে ভূষিত হন। ‘উত্তরায়ণ’কাব্যগ্রন্থের জন্য ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’১৩৮২ পান।এছাড়া ‘শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’১৯৭৫ এবং মৃত্যুর কিছুদিন অাগে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে মনোনীত হলে লেখক তা গ্রহন করেননি।

অচিন্ত্যকুমার-র উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হলঃ
‘বেদে’ ‘অাকস্মিক’ ‘ঊর্ননাভ’ ‘অাসুমদ্র’ প্রভৃতি।

অচিন্ত্যকুমার-র উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ গুলি হলঃ ‘টুটাফাটা’ ‘ইতি’ ‘অধিবাস’ ‘নায়ক নায়িকা’ ‘কালোরক্ত’ ‘প্রজাপতেয়’ ‘যতন বিবি’ ‘অাসমান জমিন’ ‘চাষাভূষা’ ‘পলায়ন’ ‘মগের মলুক’ ‘স্বাদু স্বাদু পদে পদে’
=’অাগে কহ অার’ প্রভৃতি।

অচিন্ত্যকুমার-র উল্লেখযোগ্য কাব্যগুলিঃ
‘অামরা’ ‘প্রিয়া ও পৃথিবী’ ‘নীল অাকাশ’ প্রভৃতি

‘বেদে’ অচিন্ত্যকুমার-র প্রথম মৌলিক রচনা। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ উপন্যাসটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বেদে পড়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন – ”তোমার কল্পনার প্রশস্তক্ষেত্র ও অজস্র বৈচিত্র দেখে অামি মনে মনে তোমার প্রশংসা করেছি….”।

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ”বিবাহের চেয়ে বড়”ও ”প্রাচীন প্রান্তর”অশ্লীলতার দায়ের বাজেয়াপ্ত হয়।

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ছোটোবেলা থেকেই হাঁপানি তে ভুগতেন। মৃত্যুর কিছুদিন অাগে পর্যন্তও হাঁপানী যন্ত্রনা ভোগ করত হয় লেখককে। ১৯৭৬খ্রীঃ ৭৩ বছর বয়সে কলকাতায় নিজের বাড়িতে লেখক মারা যান।

আলোচক – অমর পাঁজা, মেদিনীপুর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *