অন্যান্য সাহিত্যিক

নূরন্নেছা খাতুন – প্রথম মুসলিম মহিলা ঔপন্যাসিক

বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম মহিলা ঔপন্যাসিক হলেন নূরন্নেচ্ছা খাতুন । তিনি ছিলেন বিদ্যানুরাগী, সাহিত্যরসিক ও ভ্রমণ পিপাসু মহিলা। বাংলা সাহিত্যে তিনি একজন কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত। তাঁর উপন্যাস ও ছোটোগল্প বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সংযোজন।

জন্ম ও সাধারণ তথ্য

নূরন্নেচ্ছা খাতুন -র জন্ম ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে মূর্শিদাবাদের শাহপুরে। পিতা খোন্দকার হাবিবুস সোবহান ছিলেন এজকন সরকারি চাকুরে। লেখিকার শৈশবকাল কেটেছে পিতৃগৃহে অবরোধপ্রথার মধ্যে। প্রাথমিক শিক্ষাও তাঁর সম্পূর্ণ হয় গৃহশিক্ষার মাধ্যমে। বিদ্যানুরাগী এই মহিলা পরবর্তীতে ইংরেজি শিখেছিলেন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে নূরন্নেচ্ছার বিবাহ হয় আইনজীবি কাজী গোলাম আহমদের সঙ্গে। স্বামীর সঙ্গে দেশের নানা প্রান্তে ঘুরতে হয় তাঁকে। সেই সূত্রে তাঁর ভ্রমণ ও সাহিত্যচর্চাও গতি পায়। শুধু তাই নয় লেখিকা ‘বঙ্গীয় মোসলেম মহিলা সঙ্ঘে’র সভানেত্রী হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।

সাহিত্যে অবদান

১৩১৮ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যায় ‘কোহিনূর’ পত্রিকায় নূরনেচ্ছার একটি কবিতা প্রকাশিত হয় – ‘আহ্বান গীতি’। লেখিকার প্রথম উপন্যাস ‘স্বপ্নদৃষ্টা’ প্রকাশ পায় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে। এটি একটি পারিবারিক উপন্যাস। বাংলার শিক্ষিত মুসলিম পরিবারের কাহিনি পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।

নূরনেচ্ছার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘জানকী-বাঈ’ পরের বছর ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এটি একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। দেবলা দেবী ও খিজির খাঁয়ের বিবাহের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত। লেখিকা তাঁর স্বামীর অনুরোধে এই উপন্যাসটি লিখেছিলেন।

‘আত্মদান’ (১৯২৫) বাস্তব ভিত্তিক উপন্যাস। লেখিকা এই উপন্যাস সম্পর্কে নিজেই লিখেছেন, ‘সত্য ঘটনা-মূলক গার্হস্থ্য কথন।’ এই উপন্যাসে গার্হস্থ্য জীবনের বিয়োগান্তক কাহিনি পরিবেশিত হয়েছে।

লেখিকার ‘ভাগ্যচক্র’, ‘বিধিলিপি’ ও ‘নিয়তি’তে অদৃষ্টের কথা বলা হয়েছে। এগুলি বড় গল্প। এই রচনাগুলিতে লেখিকার দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। দেশের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় তীর্থস্থানের কিছু বর্ণণা আছে। লেখিকার সমগ্র রচনার সংকলন ‘নূরন্নেচ্ছা গ্রন্থাবলী’ প্রকাশ পায় ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে।

স্বীকৃতি

সাহিত্যে অবদানের কারণে নিখিল বঙ্গ সাহিত্য সমিতি নূরন্নেচ্ছা খাতুনকে ‘বিদ্যাবিনোদিনী’ উপাধি দেয়। এছাড়াও তিনি নিখিল ভারত সঙ্ঘ কর্তৃক ‘সাহিত্য সরস্বতী’ উপাধি পান। ঢাকার বাংলা আকাদেমি তাঁকে ফেলো সম্মান প্রদান করে।

মৃত্যু

নূরন্নেচ্ছা ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে মূর্শিদাবাদ ত্যাগ করে চলে যান তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায়। এখানেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল ঢাকাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর সম্মানে নারী শিক্ষায় অসাধারণ সফলদের নূরন্নেচ্ছা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনী স্বর্ণপদক প্রদান করে থাকে।

আলোচক – নীলরতন চট্টোপাধ্যায়, বাংলা শিক্ষক, পূর্ব বর্ধমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *