প্রবাদ প্রবচন বাগধারা

প্রবাদ প্রবচন ও বাগধারা – প্রথম পর্ব

প্রবাদ প্রবচন ও বাগধারা হল ভাষার বিশেষ সম্পদ। এই বাগধারার ব্যবহারে আমরা বাক্যকে, ভাষাকে ব্যঞ্জনাধর্মী করে তুলতে পারি। শুধু তাই না, বাগধারা বাক্যকে আলংকারিকও করে তোলে। এখানে বর্ণের ক্রমানুসারে বেশ কিছু প্রবাদ, প্রবচন ও বাগধারা ও তার অর্থ তুলে ধরা হল।

প্রবাদ প্রবচন ও বাগধারা  (অ)

অকর্মার ঢেঁকি (যা কোন কাজে লাগে না)
অকূল পাথার (খুব সমস্যা)
অগাধ জলের মাছ (খুব গোপনে যে কাজ করে)
অগ্নিশর্মা (অত্যন্ত ক্রুদ্ধ)
অন্ধের যষ্ঠি (একমাত্র সহায়)
অমাবস্যার চাঁদ (দুর্লভ দৃশ্য)
অরণ্যে রোদন (নিষ্ফল আবেদন)
অর্ধচন্দ্র (গলাধাক্কা)
অষ্টরম্ভা (কিছুই না)
অহিনকুল সম্পর্ক (চির শত্রুতা)

আঁতে ঘা (অন্তরে আঘাত)
আকাশ কুসুম (অবাস্তব কল্পনা)
আকাশ থেকে পড়া (অবাক হওয়া)
আকাশ ভেঙে পড়া (হঠাৎ বিপদ)
আক্কেল সেলামি (বোকামির দণ্ড)
আঠারো মাসে বছর (দীর্ঘকালীন)
আদাজল খেয়ে লাগা (অক্লান্ত চেষ্টা)
আদার ব্যাপারী (সামান্য মানুষ)
আলালের ঘরের দুলাল (আদুরে সন্তান)
আষাঢ়ে গল্প (আজগুবি)
আয়ারাম গয়ারাম (ফাঁকি বাজ)

ই – ও

ইঁচড়ে পাকা (অকালপক্ক)
উড়নচণ্ডী (যে বাজে খরচ করে)
উড়ো খবর (ভিত্তিহীন সংবাদ)
উত্তম মধ্যম (ব্যাপক প্রহার)
উভয় সঙ্কট (দু দিকেই বিপদ)
ঊনপঞ্চাশ বায়ু (বাতুলতা বা পাগলামি)
এক কথার মানুষ (সিদ্ধান্তে অটল)
একাই একশো (অনেক ক্ষমতার অধিকারী)
একাদশে বৃহস্পতি (সুসময়)
ওজন বুঝে চলা (ক্ষমতা অনুসারে কাজ করা)

কচ্ছপের কামড় (ভীষণ আঘাত)
কত ধানে কত চাল (উপলব্ধি বা অভিজ্ঞতা)
কলুর বলদ (অন্যের কথায় অন্ধের মত কাজ করে চলা)
কড়ায় গণ্ডায় (পুরোপুরি হিসেব)
কাঠের পুতুল (নিষ্ক্রিয়)
কান পাতলা (সহজে অন্যের কথায় বিশ্বাসী)
কানে খাটো (কম শোনা)
কুমীরের কান্না (শোকের ভান)
কূপমণ্ডুক (সংকীর্ণমনা)
কেঁচে গণ্ডুষ (গোড়া থেকে আরম্ভ করা)
কেউকেটা (গণ্যমান্য ব্যক্তি)
কৈ মাছের প্রাণ (যা সহজে মরে না)
কোমর বাঁধা (তীব্র প্রস্তুতি)

খ – ঘ

খয়ের খাঁ (তোষামুদে)
গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো (অন্যের বস্তু নিয়ে তাকেই সন্তুষ্ট করা)
গণেশ উল্টানো (ব্যবসার সমাপ্তি)
গদাই লস্করি চাল (ধীর গতি)
গভীর জলের মাছ (অতি চালাক)
গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল (নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবা)
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল (কাজ হওয়ার আগেই ভোগের চিন্তা)
গোঁফ খেজুরে (অলস)
গোবর গণেশ (যে কোন কাজে লাগে না বা অপদার্থ)
গোড়ায় গলদ (প্রথমেই ভুল)
ঘাটের মড়া (অতিশয় বৃদ্ধ)
ঘোড়ার ডিম (যার কোন অস্তিত্ব নেই)

চ – জ

চক্ষুশূল (কাউকে সহ্য না করতে পারা)
চাঁদের হাট (গুণীদের সমাবেশ)
চোখে চোখে রাখা (নজরে রাখা)
চোখের চামড়া (লজ্জা)
চুনোপুঁটি (নগণ্য ব্যক্তি)
ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো (একমাত্র অবলম্বন)
ছুঁচোর কেত্তন (অনর্গল বিবাদ)
ছেলের হাতে মোয়া (সহজলভ্য)
জলের আলপনা (ক্ষণস্থায়ী)
জিলিপির প্যাঁচ (কুটিল বুদ্ধি)

ট – ড

টইটম্বুর (কানায় কানায় ভরতি)
টনক নড়া (জ্ঞানের জাগরণ)
টাকার কুমীর (খুব ধনী)
ঠোঁঠকাটা (ষ্পষ্টবাদী)
ঠুঠো জগন্নাথ (নিষ্কর্মা)
ডাকাবুকো (সাহসি ব্যক্তি)
ডান হাতের ব্যাপার (ভোজন)
ডুমুরের ফুল (অদৃশ্য)

ত – ন

তাসের ঘর (ক্ষণস্থায়ী)
তীর্থের কাক (পর প্রত্যাশী ব্যক্তি)
তুলসী বনের বাঘ (ভণ্ড সাধু)
দক্ষযজ্ঞ (হুলুস্থুল কাণ্ড)
দশের লাঠি একের বোঝা (সকলের সাহায্যে কৃত কাজ লঘু হওয়া)
দহরম মহরম (খুব খাতির)
দু কান কাটা (নির্লজ্জ)
দু নৌকায় পা (উভয় দিকে তাল মেলানো)
দু মুখো সাপ (যার কাছে যেমন)
দুষ্ট সরস্বতী (বদ বুদ্ধি)
ধনুক ভাঙা পণ (চরম প্রতিজ্ঞা)
ধর্মের ষাঁড় (অকর্মা)
নখদর্পণ (সব খবর রাখা)
ননীর পুতুল (আদরে পালিত)
নবমীর পাঁঠা (বিপদের মুখোমুখি)
নাজেহাল (হয়রান হওয়া)

প – ব

পরকাল ঝরঝরে (ভবিষ্যত নষ্ট)
পাকা ধানে মই (ক্ষতি সাধন)
পায়াভারি (পদ গর্ব)
পায়রার খোপ (ছোট ঘর)
পি পু ফি সু (অত্যন্ত অলস)
পুকুর চুরি (নিঃশেষে হরণ)
ফুলবাবু (শৌখীন মানুষ)
বকধার্মিক (ভণ্ড)
বর্ণচোরা (যার স্বভাব লুকিয়ে থাকে)
বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড় (মালিকের থেকে শাগরেদের ক্ষমতা দেখানো)
বাঘের দুধ (যা সহজে মেলে না)
বারো মাসে তেরো পার্বণ (পরপর অনুষ্ঠান বা উৎসব)
বালির বাঁধ (ক্ষণস্থায়ী)
বাস্তু ঘুঘু (খুব চালাক)
ব্যাঙের আদুলি (সামান্য সম্বল)
বিনা মেঘে বজ্রপাত (হঠাৎ বিপদ)
বিসমিল্লায় গলদ (প্রথমেই ভুল)
বুকের পাটা (সাহস)

ভ – ম

ভস্মে ঘি ঢালা (অনর্থক ব্যয়)
ভাঁড়ে মা ভবানী (সঞ্চয় শূন্য)
ভাগের মা (যৌথ বিষয়)
ভিজে বিড়াল (যে চুপিসারে কাজ করে)
ভুতের বেগার (পণ্ডশ্রম)
মগের মুলুক (অত্যাচারী শাসন)
মশা মারতে কামান দাগা (অল্প কাজে বিপুল আয়োজন)
মহাপালের গীত (অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা)
মাটির মানুষ (অতি নিরীহ)
মাথার ঘাম পায়ে ফেলা (কঠোর শ্রম করা)
মান্ধাতার আমল (অতি প্রাচীন আমল)
মিছরির ছুরি (মধুর আঘাত)
মুখের কথা (সহজ কাজ)
মুনিনাঞ্চ মতিভ্রমঃ (মুনি-ঋষিদের যদি মতির ভ্রম হয় তাহলে সাধারণের হবেই)
মেঘ না চাইতে জল (অতিরিক্ত প্রাপ্তি)

য – হ

যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ (জীবনের শেষ লগ্ন পর্যন্ত আশায় থাকা)
যে সয় সে রয় (যার ধৈর্য আছে সে সফল হয়)
রথদেখা কলাবেচা (একই সময় একাধিক উদ্দেশ্য পূরণ)
রাঘব বোয়াল (অধিক লোভী)
লঙ্কাকান্ড (তুমুল ঝগড়া)
শাঁখের করাত (উভয় দিকেই বিপদ)
শাপে বর (অনিষ্টের পরিবর্তে ইষ্টপ্রাপ্তি)
শিরে সংক্রান্তি (আসন্ন বিপদ)
সাপের পাঁচ পা (অহঙ্কার)
সুখের পায়রা (সুসময়ের বন্ধু)
হ – য – ব – র – ল (বিশৃঙ্খল)
হরিঘোষের গোয়াল (যেখানে শুধুই গোল, কাজের কাজ হয় না)
হাঁড়ি ভাঙা (সমস্ত তথ্য ফাঁস)
হাড় কালি (খুব পরিশ্রম)
হাত করা (বশীভূত)
হাত টান (চুরি করা)
হাতে খড়ি (প্রথম শিক্ষাদান)
হাতের পাঁচ (শেষ সম্বল)
হাল ছাড়া (হতাশ হওয়া)

পরের তালিকা পেতে এখানে Click করুন।

তথ্যদানে – নীলরতন চট্টোপাধ্যায়
Editor – PSC Challenger, SLST Target

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *