এ কালের কিছু বাউল গান
এ কালের কিছু বাউল গান – বাংলাদেশের কবি প্রণব কুমার সত্যব্রতের লেখা বেশ কিছু বাউল গানের সঙ্কলন। প্রণব কুমার সত্যব্রত একজন বৈমানিক, কবি, লেখক, গীতিকার, সুরকার, আবৃত্তিকার, বংশীবাদক, সংগঠক ও গবেষক। তিনি ১৯৯৮ সালে ২০ অক্টোবর কুড়িগ্রাম জেলার সোনাবর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম রাজকিশোর রায় মাতা ধনমালা রায়। তিনি পরিবারের বড় সন্তান। কবি প্রণব কুমার সত্যব্রত মূলত ছোটবেলা থেকে ভাবুক ছিলেন, তিনি প্রথম শ্রেনী থেকে ছড়া ও কবিতা লেখার চেষ্টা করতেন। বিশেষ করে কাজী নজরুলের জীবনী ও রবি ঠাকুরের জীবনী তার মায়ের কাছে শুনে কবি এবং কবিতার প্রতি ভালোলাগা সৃষ্টি হয়। তিনি এ পর্যন্ত পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। তার লেখা গানের সংখ্যা প্রায় ২৫০ অধিক। আধুনিক, পপ, রক, লোক, দেশগান নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন। সাহিত্য সাধনার পাশাপাশি তিনি সরকারি চাকুরিতে কর্মরত আছেন। তিনি সাহিত্যে “জয়গান পুরস্কার” “সেরা পুস্তক পুরস্কার” “পল্লীকবি জসীম উদ্দীন স্মৃতি পদক” লাভ করেন।
এ কালের কিছু বাউল গান
বাউল – ১
জাতের বিচার করো কেনো জাতে বিচার করো
হিন্দু-মুসলিম বলে সদাই কিসের বিবাদ বাদো।।
আল্লাহ হরি সবই একি
রক্ত-মাংস চর্মে রেখেছে ঢাকি
একি আত্মায় মহাবিশ্ব সৃজন
নিজেই নিজেরে বধ করো।।
আদম এসে লঙ্কায় অবতরণ হলো
হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ সেই পা চিনিলো
নিজ বিশ্বাসে যে যা পাইলো দিশা
তার মত গুজব ছড়ালো।।
কবি প্রণব ভাবছে বসে
সেই তরী পার হইবো কিসে!
হিংসে-বিদ্ধেষ করে সবাই
নিজের পায়ে কুড়াল মারো।।
বাউল – ২
সাধন করিনি কভু ডাকিনি কি তোমায় প্রভু
গাইনি কি হরে কৃষ্ণ নাম?
আমায় করিও তুমি ত্রাণ
ওহে প্রাণের ঠাকুর ভগবান
আমায় করিও তুমি ত্রাণ।।
অখন্ডমন্ডলাকারে আছো সর্ব খানে
নদীর জল তুমি তৃষ্ণা নিবারনে
পুষ্প বৃক্ষের ফুল তুমি
তোমায় দিয়ে তোমারে পূজি
করোনা তো অভিমান।
আমায় করিয়ো তুমি ত্রাণ।।
কেউ বলে সাকার হরি,কেউ নিরাকারে
হাসিছেন ওই প্রাণের ঠাকুর বসে সিংহাসনে
অথই অথই জলে তোমার না কূল মেলে
রয়েছো আমাতে তুমি মহাবায়ু প্রাণ
আমায় করিয়ো তুমি ত্রাণ।।
বাউল – ৩
প্রিয়া গো আমার দেখা হবে পরজনমে
সেই জনমে হবো গো মিলন
মধুরো মাধবী লগনে,দেখা হবে পরোজনমে
হংস বেসে আসিবো মোরা
ঠিকানা হবে প্রেম যমুনা
ভালোবেসে ডোরে রাখিবো বাঁধি
রাখবিবো এই নয়নে নয়নে,
দেখা হবে পর জনমে।।
এই জনমের মনে পরবে কি স্মৃতি
ভুলে যাওয়া বিধান প্রকৃতির নীতি
দুজনে দুজনে নেবো চিনিয়া
হৃদয়ের পরশ পাথর দিয়ে,
দেখা হবে পরজনমে।।
বাউল – ৪
হলোনা গো পেলামনা তোমার দেখা
কবে হবে তোমার সনে প্রেম মধুর খেলা
বিরহ বাসনা মন এই যাতনা।।
ও গো আমার প্রাণের বন্ধু
ভরে আছে মোর প্রেম সিন্ধু
নিলে মন কেড়ে তুমি
আর ফিরে দিলেনা কেনো ফিরে দিলেনা।।
হে দয়াময় বলে ডাকি হে প্রভু
আমি তোমার দাসানুদাস ভুলিনি কভু
বৈরাগ্যের আরগ্য তুমি সব বিষয় বাসনা।।
জীবনে বেসেছি তোমায় জানো কি বিভু
প্রদীপের জলন্তবাতি করে নিভুনিভু
ভালোবাসারি পথে প্রণবের সে পথে
দাও দাও প্রভু কিঞ্চিত সান্তনা।।
বাউল – ৫
অকুল সাগরে ভাসাইয়াছো নাও
বাওরে মাঝি তুমি বাও
দমকা হাওয়ায় দোলে নাও।।
ভাসাইয়াছো ময়ূরপঙ্খির বজরা
চেলার কাঠেট মাঝেমধ্যে জোড়া
কূলের খবর হইলো সারা
নদীর ওই পাড়েতে যাও।।
তোমার ওই পাড়ের কান্ডারী
ভরসা তুমি করো তারি
না পাইলে ফিরতে আদি বাড়ি
মালিক ভরসা স্মরণ নাও।।
আরও পড়ুন
বাউল – ৬
জানো সেই অজান খবর
কি ভাব প্রকাশিলো সেই গৌর সুন্দর
ইউসুফ নবীর নফসের উপর
আছে বলো কেরে।।
আদম-হাওয়া প্রথম পুরুষ নারী
হিন্দু বৌদ্ধের স্বয়ম্ভু মনু-শতরুপা জানি
আসল তত্ত্বের হাদিস দিতে গেলে
অর্থ নারী-পুরুষ মেলে।।
বিশ্বে যত অবতার,নবী,ধ্যানেতে সিদ্ধ যোগী
নিগুঢ় কথা না জানিলে বিফল হবে সবি।
অধরারে পাইতে গেলে
আগাম খবর তারে জেনে।।
ভুলের স্রোতে ভাসতে ভাসতে ঈমান গেলো রসাতলে
বিশ্বাসেতে বস্তুমেলে অজান খবর জেনে-
বুঝি বিফল হলো মানব জনম,প্রণব বলে কেঁদে।।
বাউল – ৭
গোঁসাই সিদেল চুরি করে
বাতির নিচে অন্ধকার
গোঁসাই আমার মনের মানুষ
চোরের উপর বাটপার।।
ফোটে যে ফুল কদম গাছে
খুজিওনা বাওলার ফুলে
গন্ধম খেয়ে আদম হাওয়া।
যে পরিনতি হইলো তার।।
চোরের বড় বড় গলা
মন্দিরেতে কলা খায় সে
ওরে মন চোরা,
দিন-দুপুরে দেয় ডাকাতি।
করে সুযোগের সৎ ব্যবহার।।
বর্শিতে মীন শিকার করে
টোপ গেলেনা সকল মাছে
নফসের সংযম ইবাদত করে।
প্রণব বলে উদাস মন আমার।।
বাউল – ৮
তুমি যদি হও গো আমার
আমি হবো তোমারি ও রাই কিশোরী।।
আপন মনে হই উদাসী
কেউ নিলোনা খোঁজ আসি
মাখি গায়ে ব্রজের রাঙ্গাধূলি
সাধু চরণে যদি পাই তাহারে।।
ভাবে ভাবে হয়গো উদয়
এ জগতে কেউ কারো নয়
শুধু ভব লীলায় ঘুরে ফিরি
কেউ বুঝলোনা আমারে।।
রাই কিশোরী গো
তোমায় আমি পাবো বলে
স্বাদ মিটাইলাম গঙ্গা জলে
প্রণবের এই মিনতি
পাই যেনো গো তোমারে।।
বাউল – ৯
যদি না রাখো আর তোমার পায়
ওহে দয়াল তুমি বিনে যাবো কোথায়।।
নামটি তোমার পতিতো পাবন হরি
ওই নামের গুনে উদ্ধারে পাপী
নামের গুনে যদি এ ভব কান্ডরী
ভাঙ্গা তরী তীরে যায়।
তুমি বিনে আর যাবো কোথায়।।
মনের মানুষ মনেতে রয়
ধ্যানে,জ্ঞানে সব জাগায়
তুমি গুরু আমি শিষ্য
তুলে নাওনা তোমার নায়।
তুমি বিনে আর যাবো কোথায়।।
ভক্তিমানের কল্পতরু
বাঞ্চা করি হে গুরু
প্রণবের বুঝি যাত্রা শুরু
(আমার)ওই চরণে যেনো ঠাঁই হয়।
তুমি বিনে আর যাবো কোথায়।।
বাউল – ১০
গৌর বিনে কে পাবে হরি
তার পথে যদি যেতে পারি
যে পথে নাই জাতির বালাই
সেই পথে নাই কোনো চাতুরি।।
এলেন কলিতে গৌর ভগবান
পূর্ণব্রহ্ম সে কি আছে প্রমান?
ব্রাহ্মন হয়ে জাত মানেনা
করলো নিজ জাতির অবিচারি।।
ওগো আমার গৌর-গৌরাঙ্গ
মিটিতে মিশিলো তার সোনার অঙ্গ
জাতির গৌরব করলো পন্ড
এসে সেই অবতারি।।
বাউল – ১১
হে জগৎ গুরু তোমাকে প্রণাম
তুমি ব্রহ্মা,তুমি বিষ্ণু,তুমি শিব
তুমি কালী,তুমি সব রুপ ধরি
ভক্তে করো তুমি ত্রাণ।।
জানি এক অদ্বীতিয় তুমি
ব্রহ্মা,বিষ্ণু তোমার সৃষ্টি
সৃষ্টির পূজায় তুমি তুষ্টি
শাস্ত্রে দিয়েছো বিধান।।
এই মানুষে হয় দেবতা
অসুর,দৈত্য,গন্ধর্ব
আবার এই মানুষেই মাহামনব রুপে
শঙ্ক-চক্রে-গদা-পদ্মে হয় ভগবান।
বাউল – ১২
কি নাম দিলো নদের গোরা
যত গাহি তত সুধারে…
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ,কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম,রাম রাম হরে হরে।।
এই মধুর রাম নামে যত পাপ-তাপ হরে
জীবের কি স্বাধ্য আছে তত পাপ করে।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ,কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম,রাম রাম হরে হরে।।
নদীয়ার বিষ্ণুপ্রিয়া চৈতন্যের সে প্রাণ প্রিয়া
ছেড়ে চলে গেলো সে, তার কেমন হিয়া রে।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ,কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম,রাম রাম হরে হরে।।
নিতাই যাব ব্রজের অলিগলি,মাখবো সাধুর চরণ ধুলি
প্রণব বলে অঙ্গে মেখে প্রেমসুধা মাতামে মাতবো রে।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ,কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম,রাম রাম হরে হরে।।
বিঃ দ্রঃ সমস্ত গীত প্রণব কুমার সত্যব্রত কর্তৃক প্রেরিত। গীত-রচয়িতার সত্যতা যাচাই করতে পারেনি টার্গেট বাংলা।