মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় – বাংলা সাহিত্যের ‘মানিক’
কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় -এর (১৯০৮ খ্রিঃ ১৯ শে মে – ১৯৫৬ খ্রিঃ ৩ রা ডিসেম্বর) রচনায় ফ্রয়োডীয় মনোবিকলন তত্ত্ব, ফ্রয়েডীয় স্বপ্ন তত্ত্বের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমকালীন সময়ে তাঁর চোখে ধরা পড়ল অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে দেখতে পেলেন ভীষণ স্বার্থপরতা, দেখলেন পুঁজিপতিদের হিংস্রলোভ। পুঁজিপতিদের মুখোশ খুলে দিতে এবং মধ্যবিত্তের স্বার্থপরতার নগ্ন রুপ দেখিয়ে দেবার জন্য তিনি মাটির মানুষের কাছে নেমে এলেন, যার ছাপ পড়ল তাঁর রচনায়। মার্ক্সবাদী চেতনায় তিনি প্রভাবিত হলেন।কমিউনিষ্ট শিল্পী,সাহিত্যিকদের নিয়ে কলকাতায় ” ফ্যাসিষ্ট বিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ ” প্রতিষ্ঠিত হল। মানিক নিজে এই সংঘের সদস্য হলেন ১৯৪৭ এ। তিনি নিজেকে শ্রমজীবী শ্রেণীর একজন বলে মনে করতেন।
“কল্লোল যুগ ” গ্রন্থে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত বলেন – মানিকই একমাত্র আধুনিক লেখক যে ‘কল্লোল’ ডিঙিয়ে বিচিত্রায় চলে এসেছে – আসলে সে ‘কল্লোলর’ই কুলবর্ধন”। “দেশ ” পত্রিকায় “মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ” প্রবন্ধে প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখেছেন — “” মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বিরলতম লেখকদের একজন জীবন ও সাহিত্যে মানব-সত্তা যাঁদের অভিন্ন। “বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। নিরাসক্তভাবে তিনি মানুষের জীবনচিত্র এঁকে গেছেন, তাদের জীবনসমস্যার গ্রন্থিমোচনে তৎপর হয়েছেন। ফ্রয়েডপন্থি মনোবিকলন, মনোবিকার তত্ত্ব এবং মার্কসীয় দৃষ্টিকোন লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় করে রেখেছে।
তাঁর লেখনিতেও এর স্পষ্ট প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তার উল্ল্যেখযোগ্য রচনা গুলি হল :-
উপন্যাস তালিকা
দিবারাত্রির কাব্য ( ১৯৩৫) জননী ( ১৯৩৫) পুতুলনাচের ইতিকথা ( ১৯৩৬) পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬) জীবনের জটিলতা ( ১৯৩৬) শহরতলী ( ১৯৪০,১৯৪১) প্রতিবিম্ব (১৯৪৩) দর্পণ (১৯৪৫) চতুস্কোণ (১৯৪৮) চিহ্ন (১৯৪৭) স্বাধীনতার স্বাদ (১৯৫১) আরোগ্য (১৯৫৩) শান্তিলতা ( ১৯৬০) মাঝির ছেলে (১৯৬০) প্রভৃতি।
ছোটোগল্প তালিকা
অতসীমামী ও অনান্য গল্প, আত্মহত্যার অধিকার , প্রাগৈতিহাসিক, মিহি ও মোটা কাহিনি, সরীসৃপ, বৌ, সমুদ্রের স্বাদ, ভেজাল, হলুদ পোড়া, পরিস্থিতি, ছোটো বকুল পুরের যাত্রী, লাজুকলতা, ফেরিওলা, হারানের নাত জামাই প্রভৃতি।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি নাটক হল – “ভিটেমাটি” (১৯৪৬)
মানিকের একটি প্রবন্ধ সংকলনের নামও পাওয়া যায় – ” লেখকের কথা”(১৯৫৭)
রচনা সম্পর্কে
ক) জননী :- মার্ক্সসীয় দৃষ্টির উপর লেখা। প্রধান চরিত্র :- শ্যামা
খ) দিবারাত্রির কাব্য :- তিন জোড়া নারী পুরুষের কথা। চরিত্র:- সুপ্রিয়া,মালতি,আনন্দ,অশোক, হেরম্ব
গ) পুতুল নাচের ইতিকথা :- সামন্ততন্ত্রের প্রতি জেহাদ। চরিত্র :- কুসুম,শশী।
ঘ) পদ্মানদীর মাঝি :- ধীবর পল্লীর জীবন যাত্রা এর প্রধান বিষয়। খেটে খাওয়া মানুষের কথা এখানে দেখনো হয়েছে। চরিত্র:- কুবের, হোসেন মিঞা।
ঙ) শহরতলী :- চরিত্র :- সত্যপ্রিয় চক্রবর্তী, যশোদা
চ) সহরবাসের ইতিকথা :- চরিত্র:- শ্রীপতি, সন্ধ্যা
ছ) চিহ্ন :- চরিত্র:- অক্ষয়,সুধা
জ) চতুস্কোণ :- চরিত্র:- গিরি,মনোরমা।