বাক্যতত্ত্ব

পদ পরিচয়

বাক্যতত্ত্বের একটি অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় হল পদ ক্রম। কোন একটি নির্দিষ্ট ভাষায় বাক্যে বিভিন্ন পদগুলি কে কার পরে বসবে সেই সংক্রান্ত যে বিধি তাকেই পদ ক্রম বলে।

বাংলা বাক্যে পদের ক্রমটি হল কর্তা > কর্ম > ক্রিয়া। বাংলা বাক্যের দুটি মূল উপাদান হল উদ্দেশ্য ও বিধেয়। বাক্যে যার সম্পর্কে কিছু বলা হয় তাই হল বাক্যের উদ্দেশ্য। বাক্যের কর্তা হল বাক্যের উদ্দেশ্য। বাক্যের উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা কিছু বলা হয় বা বাক্যের কর্তা যা করে তাকে বিধেয় বলে। বাক্যের ক্রিয়া হল এই বিধেয়।

পদের পরিচয়

যখন কোন শব্দ বা ধাতু বিভক্তিযুক্ত হয়ে বাক্যে বসার উপযুক্ত হয় তখন তাকে পদ বলে। যেকোন বাক্যের প্রতিটি অংশই এক একটি পদ। পদ প্রধানত দুই প্রকার – নামপদ ও ক্রিয়াপদ। নামপদ আবার চার প্রকার । যেমন – বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও অব্যয়। তাহলে পদ হল মোট পাঁচ প্রকার।

বিশেষ্য পদ 

যে প্রকার পদ দ্বারা কোন কিছুর নাম বোঝানো হয় তাকেই বিশেষ্য পদ বলে। যেমন – রবীন্দ্রনাথ, কলকাতা, মানুষ, রুপো, দল ইত্যাদি।

বিশেষ্য পদের শ্রেণীবিন্যাসগুলি হল – সংজ্ঞা বাচক, জাতিবাচক, বস্তুবাচক, সমষ্টিবাচক, সংখ্যাবাচক, গুণবাচক, অবস্থাবাচক, ভাববাচক ও ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য।

সংজ্ঞা বাচক বিশেষ্য – এই প্রকার বিশেষ্য দ্বারা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি, স্থান, দেশ, নদী, পর্বত, প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির নাম বোঝানো হয়। যেমন – রামকৃষ্ণ, ভারতবর্ষ, হিমালয়, মথুরা, বেলুড় মঠ ইত্যাদি।

জাতিবাচক বিশেষ্য – এই প্রকার বিশেষ্য দ্বারা কোন জাতি, ধর্ম, বস্তু বা প্রাণীর নাম বোঝায়। যেমন – মানুষ, পাখি, হিন্দু, পতঙ্গ ইত্যাদি।

বস্তুবাচক বিশেষ্য – এই বিশেষ্যের দ্বারা কোন বস্তুর নাম বোঝানো হয়। যেমন – রুপো, চিনি, দুধ, বাতাস, টাকা ইত্যাদি।

সমষ্টিবাচক বিশেষ্য – এই প্রকার বিশেষ্য দ্বারা জাতিবাচক বিশেষ্যের সমষ্টি বোঝায়। যেমন – দল, সমিতি, জনতা, স্তবক ইত্যাদি।

সংখ্যাবাচক বিশেষ্য – এই প্রকার বিশেষ্য দ্বারা বিভিন্ন সংখ্যার নাম নাম বোঝায়। যেমন – সাত, এক, পাঁচ ইত্যাদি।

অবস্থাবাচক বিশেষ্য – এই প্রকার বিশেষ্য দ্বারা প্রাণী বা বস্তুর অবস্থাকে বোঝানো হয়। যেমন – শৈশব, সুখে, সন্ধ্যা

ভাববাচক বিশেষ্য – এই প্রকার বিশেষ্য দ্বারা প্রাণীর মনের নানা ভাবকে বোঝানো হয়। যেমন – আনন্দ, তৃপ্তি, উল্লাস, হর্ষ ইত্যাদি।

ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য – এই প্রকার বিশেষ্য দ্বারা কোন কাজের নাম বোঝানো হয়ে থাকে। যেমন – ভোজন, শয়ন, রোদন ইত্যাদি।

বিশেষণ পদ

বাক্যের যে পদ দ্বারা অন্য পদকে বিশেষিত করা হয় তাকে বিশেষণ পদ বলে। বিশেষণ পদ প্রধানত তিন প্রকার – নাম বিশেষণ, ক্রিয়া বিশেষণ ও বিশেষণের বিশেষণ।

নাম বিশেষণ

যে বিশেষণ পদ দ্বারা বিশেষ্য পদের গুণ, ধর্ম, পরিমাণ, অবস্থা প্রভৃতি বোঝায় তাকে নাম বিশেষণ বলে।

যেমন – কনকনে শীত, পাটাবুকো লোক ইত্যাদি।

সংখ্যাবাচক বিশেষণ

সংখ্যাবাচক বিশেষণ নাম বিশেষণের একটি বিশেষ শ্রেণী। এই প্রকার বিশেষণ দ্বারা বিশেষ্যের সংখ্যা নির্দেশ করা হয়। যেমন – সাত দিনে এক সপ্তাহ।

পূরণবাচক বিশেষণ – এটিও নাম বিশেষণের একটি শ্রেণী। যা দিয়ে সংখ্যা পূর্ণ হয় তাকে পূরণ বলে। আর যে প্রকার বিশেষণ দ্বারা এও পূরণের বোধ জন্মায় তাকেই পূরণবাচক বিশেষণ বলে।

যেমন – ছেলেটি ক্লাসে প্রথম হয়েছে।

বহুপদ নাম বিশেষণ – দুই বা তার অধিক পদ সমাসবদ্ধ হয়ে বিশেষ্যের পূর্বে বসে বিশেষণের কাজ সম্পন্ন করলে তাকে বহুপদ বিশেষণ বলে।

যেমন – মা – মরা মেয়ে।

ক্রিয়ার বিশেষণ

যে প্রকার বিশেষণ দ্বারা কোন ক্রিয়ার কার্যপ্রণালী সম্পর্কে কিছু বোঝানো হয় তাকে ক্রিয়ার বিশেষণ বলে।

যেমন – সভয়ে লোকটি বলল, জোরে ছুটছে ইত্যাদি।

বিশেষণের বিশেষণ

যে প্রকার বিশেষণ বাক্যস্থ অন্য বিশেষণের গুণ, দোষ, পরিমাণ বা অবস্থার পরিচয় দেয় তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে। যেমন – তুর্ণি খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে। টকটকে লাল ফুল এনেছে চিত্রণ।

সর্বনাম 

কোন একটি বিশেষ্য পদের পুনরায় উল্লেখ না করে সেই বিশেষ্যের পরিবর্তে যেসব পদ ব্যবহার করা হয় তাকে সর্বনাম বলে। যেমন – তিনি, সে, সব, আমি নিজ, যারা ইত্যাদি। ‘সর্বনাম’ শব্দের অর্থ সকল নাম। সব রকম নামের পরিবর্তে এই পদ ব্যবহার করা বলে পদগুলির নাম সর্বনাম।

সর্বনাম পদের শ্রেণীগুলি হল – ব্যক্তিবাচক, নির্দেশক, অনির্দেশক, প্রশ্নবাচক, আত্মবাচক, সাকল্যবাচক, সাপেক্ষ ইত্যাদি।

ব্যক্তিবাচক সর্বনাম – এই প্রকার সর্বনাম দ্বারা কোন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়। যেমন – আমি, আমরা, তুমি, তোমরা

নির্দেশক সর্বনাম – এই প্রকার সর্বনাম দ্বারা কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করা হয়। যেমন – এ, এরা, ইহা, এটা ইত্যাদি।

অনির্দেশক সর্বনাম – এই প্রকার সর্বনাম দ্বারা কোন অনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝানো হয়। যেমন – কেউ, কেহ, কিছু, অমুক ইত্যাদি।

প্রশ্নবাচক সর্বনাম – এই প্রকার সর্বনামে কোন কিছু জানার চেষ্টা করা হয়। যেমন – কে , কী, কারা, কিসে ইত্যদি।

আত্মবাচক সর্বনাম – এই প্রকার সর্বনামে কারোর সাহায্য ব্যাতীত কোন কাজ সম্পন্ন করার ভাব ব্যক্ত হয়। যেমন – নিজ, আপনি, আপনাদের ইত্যদি।

সাকল্যবাচক সর্বনাম – এই প্রকার সর্বনাম দ্বারা সমষ্টিবাচক ব্যক্তি, বস্তু বা ভাবের প্রকাশ ঘটে। যেমন – সব

সাপেক্ষ সর্বনাম – সাপেক্ষ সর্বনাম একটি সংযোগমূলক সর্বনাম। যখন দুটি সর্বনাম একটি অপরের উপর নির্ভরশীল থাকে তখন তাকে সাপেক্ষ সর্বনাম বলে। যেমন – যে – সে, যা – তা, যিনি – তিনি ইত্যাদি।

অব্যয় 

যে সকল পদ লিঙ্গ বচন বিভক্তিভেদে কোন প্রকার রূপান্তরিত হয় না অর্থাৎ যাদের মূল রূপের কোন ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না তাদের অব্যয় পদ বলে। যেমন – বা, ও, এবং, সাথে ইত্যাদি।  অব্যয়ের শ্রেণীগুলি হল – পদাণ্বয়ী অব্যয়, বাক্যাণ্বয়ী অব্যয়, ভাববাচক অব্যয় ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়।

পদাণ্বয়ী অব্যয় – যে সমস্ত অব্যয় বাক্যের বিভিন্ন পদের মধ্যে অণ্বয় স্থাপন করে তাকে পদাণ্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন – দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে

বাক্যাণ্বয়ী অব্যয় – এই প্রকার অব্যয় একাধিক বাক্যের সংযোগ, বিয়োগ বা সংকোচন ঘটায়। যেমন – সেদিন প্রথম ডাক্তার দেখল এবং সেদিনই ডাক্তারের দেখা শেষ হল।

ভাববাচক অব্যয় – এই প্রকার অব্যয় মনের বিভিন্ন ভাবের প্রকাশ করে থাকে। যেমন – হায়! হায়! কী সরবনাশই না হল।

ধ্বন্যাত্মক অব্যয় – এই প্রকার অব্যয় বাস্তব ধ্বনির ব্যঞ্জনা দেয়। যেমন – ঝকঝক কলসির বকবক শোনলো।

বাক্যালঙ্কার অব্যয় – এই প্রকার অব্যয় বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন – এ তো মেয়ে মেয়ে নয়, দেবতা নিশ্চয়।

সাপেক্ষ শব্দজোড় যেসব অব্যয় বাক্যে ব্যবহারের সময় একে অপরের উপর নির্ভরশীল থাকে সেইসব অব্যয়কে সাপেক্ষ শব্দজোড় বলে। যেমন – যদি সে আসে তবে আমি যাবো।

তথ্যগ্রহণ

‘প্রগ্রেসিভ পাব্লিশার্স’ প্রকাশিত ‘এসএসসি টার্গেট এসএলএসটি বাংলা’ গ্রন্থ।