অন্যান্য সাহিত্যিক

আধুনিক কবি শঙ্খ ঘোষ

জীবনানন্দ দাশ পরবর্তী বাংলা কবিতার ইতিহাসে শঙ্খ ঘোষ এক জন প্রতিনিধি স্থানীয় কবি। তিনি এক স্বতন্ত্র ভাব ও ভাষার প্রবর্তক। তবে তিনি শুধু কবি নন, তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, সাহিত্য সমালোচক এবং রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও বটে। তার কাব্যে স্থান পেয়েছে মানুষ, দেশ, সমাজ ও সভ্যতার কথা।

জন্ম ও বংশ পরিচয়

শঙখ ঘোষের আসল নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান বাংলাদেশের চাঁদপুরে ১৯৩২ খ্রি ৫ই ফেব্রুয়ারি। পিতার নাম মনীন্দ্রকুমার ঘোষ এবং মাতা অমলা ঘোষ।

শিক্ষাজীবন

বাল্যবয়সে তিনি বাংলাদেশের পাবনা জেলার চন্দ্রপভা বিদ্যাপীঠ এ ভর্তি হন। সেখান থেকে ম্যট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করেন। দেশ বিভাগের পর কবির পরিবার কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৪৯ খ্রী প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আই এ পরীক্ষায়য় প্রথম বিভাগে পাশ করেন। ১৯৫১ খ্রি ওই কলেজ থেকেই বি এ পাশ করেন। ১৯৫৪খ্রি তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা এম এ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।

কর্মজীবন

তিনি কর্মসুত্রে বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেন। যেমন বঙ্গবাসী, জঙ্গিপুর কলেজ, বহরমপুর গার্লস কলেজ, সিটি কলেজ এবং শেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

সাহিত্যজীবন 

শঙ্খ ঘোষের সাহিত্যজীবন শুরু ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকায়। এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যাতেই তার দিন গুলি রাত গুলি’ কবিতাটি বের হয় (১৯৫৩)। এই শিরোনামেই তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে।এর পর তার লেখনি থেমে থাকে নি। কবিতা, প্রবন্ধ,সাহিত্য সমালোচনা মুলক গ্রন্থ, উপন্যাস প্রভৃতি একে একে প্রকাশিত হতে থাকে –

কাব্যগ্রন্থ

নিহিত পাতাল ছায়া (১৯৬৭)  আদিম লতাগুল্মময় (১৯৭২) মুর্খবড় সামাজিক নয় (১৯৭৪) বাবরের প্রার্থনা  (১৯৭৬) তুমি তো তেমন গৌরী নও (১৯৭৮) পাজরে দাড়ের শব্দ (১৯৮০) প্রহর জোড়া ত্রিতাল (১৯৮২)
বন্ধুরা মাতি তরজায় (১৯৮৪) মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে (১৯৮৪) ধুম লেগেছে হৃৎ কমলে (১৯৮৭) লাইনেই ছিলাম বাবা (১৯৯৩) গন্ধর্বকবিতাগুচ্ছ (১৯৯৪) শবের উপর শামিয়ানা (১৯৯৭) ছন্দের ভিতর এত অন্ধকার (১৯৯৯) জলই পাষাণ হয়ে আছে (২০০৪) সমস্ত ক্ষতের মুখে পলি (২০০৭)  বহুল দেবতা বহু স্বর

ছড়া জাতীয় গ্রন্থ
রাগকরোনা রাগুনি (১৯৮৩) সব কিছুতেই খেলনা হয় (১৯৮৮) আমন ধানের ছড়া (১৯৯১) আমন যাবে লাট্টু পাহাড়  (১৯৮৮) ওরে ও বায়নাবতী (২০০৩)

প্রবন্ধ ও সাহিত্য সমালোচনা মুলক গ্রন্থ
ওকোম্পর রবীন্দ্রনাথ  কালের যাত্রা ও রবীন্দ্রনানাটক  কবিতার মুহুর্ত  কবির অভিপ্রায়  ঐতিহ্যির বিস্তার  ইচ্ছামতির মশা  এ আমির আবরণ  ছন্দের বারান্দা  ছন্দোময় জীবন  নির্মান আর সৃষ্টি  শব্দ নিয়ে খেলা(কুন্তক)
উর্বশীর হাসি  নিঃশব্দের তর্জনী

উপন্যাস
সকাল বেলার আলো (১৯৭২) সুপুরি বনের সারি (১৯৯০)

ছদ্মনাম – কুন্তক, শুভময় রায়।

পুরষ্কার

সাহিত্য একাডেমী – ১৯৭৭ খ্রিঃ – ‘বাবরের প্রার্থনা’
মুর্খ বড় সামাজিক নয়– নর সিংহ দাস পুরস্কার (১৯৭৭)
ধুম লেগেছে হৃৎকমলে–রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৮৯)
গন্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ -সরস্বতী সম্মান
অনুবাদ -রক্তকল্যান- সাহিত্য একাদেমী
কবিতার মুহুর্ত– শিরোমণি পুরস্কার
জোড়া ত্রিতাল- ত্রিবান্দ্রমের কুমারণ আসন পুরস্কার
১৯৯৯ বিশ্ব ভারতী থেকে দেশিকোত্তম
২০১১ সালে পদ্মভূষণ
১৯৯৮  মধ্যপ্রদেশ সরকার কবীর সম্মান।

এছাড়া তিনি আরো বহুসম্মানে ভুষিত হন।

কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতায় বার বার স্থান পেয়েছে সমকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, স্বার্থসর্বস্ব রাজনীতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য। মনুষত্বহীন মানুষের দ্বারা লাঞ্ছিত মানুষের অসহায় অবস্থার চিত্র। তবে কবি আশাবাদী। অত্যাচারীতত মানুষের সংঘবদ্ধ ক্ষমতাই আত্যাচারিকে ধ্বংস করবে এই প্রত্যয় তার কবিতায় বার বার ব্যাক্ত হয়েছে। শব্দ ব্যবহারের দিক থেকে তিনি সচেতন শিল্পী। তার কাব্যে শব্দের বাচ্যার্থের চাইতে ব্যঙ্গার্থ অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। চিত্রকল্প ব্যবহারের দক্ষতা এবং নব নব ছন্দরীতির বিন্যাস তার কবিতাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। কবি এখনো নিয়মিত সাহিত্যচর্চায় নিমগ্ন রয়েছেন। তার লেখনীতে বাংলা সাহিত্য আরো সমৃদ্ধ হবে।

আলোচক – হাবিবুর রহমান

One thought on “আধুনিক কবি শঙ্খ ঘোষ

  • Avatar

    একটু ছোটো ছোটো লেখা হলে ভালো হতো মানে পয়েন্ট যেমন আছে তেমনই থাক ।একটু পয়েন্টের
    লেখা গুলো ছোটো হলে ভালো হতো ।।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *