ভারতপথিক রামমোহন রায়
ভারতপথিক রামমোহন রায় সম্পর্কে নানা তথ্য আলোচিত হয়েছে এই প্রচ্ছদে। বাংলার সাহিত্য ও সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই আলোচনায় তাঁর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে নানা তথ্য পাবেন পাঠক। রামমোহন রায়ের জীবন ও সাহিত্য বিষয়ক আমাদের ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখুন এখানে ক্লিক করে।
জীবনকথা
জন্ম : ১৭৭২ খ্রিঃ মতান্তরে ১৭৭৪ খ্রিঃ
মৃত্যু : ১৮৩৩ খ্রিঃ ইংল্যান্ডে।
বংশ পরিচয় : নবজাগরণের আগ্রদূত রাজা রামমোহন রায় জন্ম গ্রহণ করেন হুগলি জেলার আরামবাগ মহুকুমার অন্তর্গত রাধানগরে এক রাঢ়ী ব্রাহ্মণ পরিবারে। তার পিতার নাম রামকান্ত রায় এবং মাতার নাম তারিণী দেবী। তার পিতৃকুল ছিল ছিল বৈষ্ণব এবং মাতুল বংশ ছিল শৈব। তিনি তিনটি বিবাহ করেছিলেন । তার দুই পুত্র – রাধাপ্রসাদ এবং রামপ্রসাদ।
শৈশব জীবন এবং শিক্ষা
রামমোহন শৈশবে গ্রামের পাঠশালাতে বাংলা এবং কিছুটা সংস্কৃত শিখেছিলেন। পরে ৯ বছর বয়সে পাটনা যান । সেখানে মদ্রাসায় ফার্সি এবং আরবী ভাষায় বুৎপত্তি লাভ করেন। ২ বছর পর ১১ বছর বয়সে সেখান থেকে বারানসী যান উত্তম রূপে সংস্কৃত ভাষা এবং বেদ ও উপনিষদে জ্ঞান লাভা করতে। এছাড়াও তিনি পরবর্তী কালে নিজের চেষ্টায় হিন্দি , হিব্রু এবং ইংরেজী ভাষা শিখে ছিলেন ।
কর্মজীবন
শিক্ষা লাভের পর প্রথম জীবনে তিনি পৈত্রিক সম্পত্তি দেখাশোন করতেন। পরে রামগড়ে সেরেস্তাদারির কাজ পান (১৮০৬)। দেওয়ান পদ লাভ করেন ১৮০৯ খ্রি। সরকারি কাজে ভুটান যাত্রা করেন ১৮১৫ খ্রি:। ফিরে এসে স্থায়িভাবে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। পরে মুঘল সম্রাটের দূতরূপে বিলাত যাত্রা করেন ১৮৩০ খ্রি:।
সমজ সংগঠন মুলক কাজ :
তিনি পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে প্রচার করতে এবং উপনিসদের একেশ্বরবাদ প্রচার করতে ১৮১৫ খ্রিস্টব্দে ‘আত্মীয় সভা’ প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘ ব্রাহ্ম সভা ‘ নামে পরিচিত হয়। এছাড়াও সতিদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে তার অবদান চিরস্মরণীয়। মূলত তার প্রচেষ্টাতেই ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে সতীদাহ বিরোধী বিল পাশ হয়।
সাহিত্য কর্ম
১. তুহফাৎ-উল-মুয়াহ্হিদ্দিন (১৮০৩-০৪)
২. বেদান্ত গ্রন্থ (১৮১৫)
৩. বেদান্ত সার (১৮১৫)
৪. উপনিষদের অনুবাদ (১৮১৫-১৯)
৫. উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগিশের সহিত বিচার (১৮১৬)
৬. ভট্টাচার্যের সহিত বিচার (১৮১৭)
৭. গোস্বামীর সহিত বিচার (১৮১৮)
৮. সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক নিবর্তক সংবাদ (১৮১৮-১৮১৯)
৯. কথাকারের সহিত বিচার (১৮২০)
১০. সুব্রহ্মণ্য শাস্ত্রীর সহিত বিচার (১৮২০)
১১. ব্রাহ্মণ সেবধি (১৮২১)
১২. চারি প্রশ্নের উত্তর (১৮২২)
১৩. গুরু পাদুকা (১৮২৩)
১৪ পাদ্রি শিষ্য সম্বাদ (১৮২৩)
১৫. পথ্য প্রদান (১৮২৩)
১৬. কায়স্থের সহিত মধ্যপান বিষয়ক বিচার (১৮২৬)
১৭. ব্রহ্মসঙ্গীত (১৮২৮)
১৮. সহমরণ বিষয়ক (১৮২৯)
১৯. গৌড়ীয় ব্যাকরণ (১৮৩৩)
রামমোহনের গদ্যভাষার বৈশিষ্ট্য
১. তিনিই প্রথম বাংলা গদ্যকে মনন দীপ্ত তর্কবিতর্ক আলোচনায় ব্যবহার করেন।
২. তার গদ্যভাষায় কর্কশতা থাকলেও গঠনশক্তি ও আকর্ষণীয়তা ছিলো ।
৩. ঈশ্বর গুপ্ত বলেছেন – ” দেওয়ানজী জলের ন্যায় সহজ ভাষায় লিখিতেন, তাহাতে ….. ভাবসকল অতিসহজে স্পষ্ট রূপে প্রকাশ পাইত, …… কিন্তু সেলেখার শব্দের বিশেষ পারিপাট্য ও তাদৃশ মিষ্টতা ছিল না”
৪. প্রমথ চৌধুরী তার গদ্য ভাষাকে ‘জলবৎ তরল ‘ বলেছেন ।
৫. তার আর একটি বৈশিষ্ট্য বোধগম্যতা। তবে ছেদ-যতির যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় অনেক সময় সে গদ্য আরষ্ট হয়ে পরেছে।
৬. তিনি বাংলা গদ্যকে গুরু গম্ভীর বিষয় আলোচনা এবং তর্ক বিতর্কের বাহন করে তুলেছিলেন।
৭. তিনি ইংরেজি বাক্য গঠন রীতি অনুসারে ‘এবং’ দিয়ে বাক্য শুরু করেছিলেন ।
৮. রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-
” রামমোহন বঙ্গসাহিত্যকে গ্রানাইট স্তরের উপর স্থাপন করিয়া নিমজ্জন দশা হইতে উন্নত করিয়া তুলিয়াছেন।”