আরাকান রাজসভার কবিগণ
বাংলা সাহিত্যের বিকাশে আরাকান রাজসভার কবিদের বিশেষ ভূমিকা আছে। আরাকানের রাজধানী ছিল মোহাং। মোহাং এর বিকৃত উচ্চারণ রোহাং বলা হোত, আর রোহাংকে লেখা হত রোসাং। কবিরা অভিহিত করেছেন রোসাঙ্গ নামে। সেই রোসাঙ্গ বা আরাকানের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন কবিদের তথ্য দেওয়া হয়েছে এই আলোচনায়।
আরাকানের ইসলামী সাহিত্যঃ পঞ্চদশ শতাব্দীর কবি
- শাহ মুহম্মদ সগীর – ইউসুফ জুলেখা
- জৈনুদ্দিন – রসুলবিজয়
- মোজাম্মিল – সয়ৎনামা, খঞ্জন চরিত্র
- সারিবিদ খাঁ – বিদ্যাসুন্দর (ইসলামী গল্পবিষয়ক কাব্য)
- দেনাগাজী – সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল।
- দৌলত উজীর – লায়লা মজনু।
- মহম্মদ কবীর – মধুমালতী ( হিন্দু আখ্যান কাব্য )
- মুল্লা দাউদ – চান্দ্রায়ণ কাব্য।
- আব্দুল হাকিম – ইউসুফ জুলেখা।
- মহম্মদ খান – সত্যকলি বিবাদ বিসংবাদ।
আরাকানের ইসলামী সাহিত্যঃ সপ্তদশ শতাব্দীর কবি :
১. দৌলত কাজী
- কাব্য : লোরচন্দ্রানী বা সতী ময়না।
- উৎস : হিন্দি কবি মিয়া সাধনের মৈনা-কো-সত। এ ছাড়া মূল্লা দাউদের চান্দ্রায়ণ কাব্য।
- প্রেরণা : আরাকানের আসরফ খান
- রাজা : শ্রী সুধর্মা (থিরি থু ধম্মা)
- রচনাকাল : ১৬২৯ খ্রিঃ থেকে ১৬৩৮ খ্রিঃ -এর মধ্যে।
- অন্যান্য : কাব্যটির দুই তৃতীয়াংশ রচনার পর কবি লোকান্তরিত হন। বাকি অংশ সমাপ্ত করেন সৈয়দ আলাওল।
সৈয়দ আলাওল
কবি পরিচিতি : রোসাঙ্গ রাজসভার একজন উল্লেখযোগ্য কবি।
জন্মস্থান : আলাওলের পৈতৃকভূমি ফতেহাবাদের অন্তর্গত জালালপুরে। অনেকের মতে এই জায়গাটি চট্টগ্রামের অন্তর্গত। আবার কেউ বলেছেন ফরিদপুরে। কিন্তু কবি লিখেছেন – ” মুলুক ফতেয়াবাদ গৌড়েতে প্রধান।” আবার কোথাও লিখেছেন – ” ভাগীরথী গঙ্গাধার রহে মধ্য রাজ্য “। সুতরাং ইহা পশ্চিম অথবা মধ্যবঙ্গে হওয়াই সম্ভব” – সুকুমার সেন।
আলাওলের পৃষ্ঠপোষকগণ : মাগন ঠাকুর। মাগন ঠাকুরের মৃত্যু হলে আলাওলকে আশ্রয় দান করেন রাজা শ্রীচন্দ্র সুধর্মা অর্থাৎ থিরি-চান্দ-থু-থম্মার মহাপাত্র সুলেমান। এর পর বিভিন্ন কারনে ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। শেষে রোসাঙ্গের কাজী সুফি পীর সৈয়দ মাসুদ শাহার পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহন করেন।
আলাওলের গ্রন্থাবলী : পদ্মাবতী ( ১৬৪৬), সয়ফুলমুলুক-বদিউজ্জামাল ( প্রথম খন্ড -১৬৫৯ , দ্বিতীয় খন্ড -১৬৬৯ ), হপ্তপয়কর(১৬৬০), সেকেন্দারনামা ( ১৬৭২ ), তোহফা (১৬৬৩ -৬৪)