শব্দভাণ্ডার

শব্দভাণ্ডার

শব্দভাণ্ডার ‘হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন’ – বাংলা শব্দ ভাণ্ডারে আছে নানা শব্দ। সেই সমস্ত শব্দের উৎস নিয়ে আমাদের এই প্রয়াস। জেনে নিন কোন শব্দের উৎস কী ?

উৎস বিচারে শব্দ ভান্ডার কে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:- ক, মৌলিক শব্দ  খ,আগন্তুক শব্দ

মৌলিক শব্দ  প্রাচীন ভারতীয় আর্য-ভাষা বা সংস্কৃত থেকে পরিবর্তিত বা অপরিবর্তিত রুপে গৃহীত শব্দ গুলিকে বলা হয় মৌলিক শব্দ।
তৎসম, তৎভব ও অর্ধ-তৎসম শব্দ গুলি এর অন্তর্ভুক্ত।

আগন্তুক শব্দ  বিভিন্ন কালে বিভিন্ন ভাষার সংস্পর্সে আসার ফলে তাদের বহু শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে ; তাদের বলা হয় আগন্তুক শব্দ।
যেমন :- দেশী ও বিদেশী শব্দ।(মজার ব্যাপার হল দেশী শব্দ গুলি ও আগন্তুক শব্দ।

তৎসম শব্দ (তদ্ = সংস্কৃত , সম = সমান ; অর্থাৎ, সংস্কৃতের সমান) যে সমস্ত শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে অপরিবর্তিত আকারে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে , তাদের তৎসম শব্দ বলে।
যেমন :- শিশু , মানব , পুত্র , বধু , মাতা , সাগর , আকাশ জীবিকা ইত্যাদি।

তদ্ভব শব্দ (তদ =সংস্কৃত , ভব = জাত ; অর্থাৎ সংস্কৃত থেকে জাত) যে সমস্ত সংস্কৃত শব্দ যুগ-যুগান্তরের বিবর্তনের পথে প্রাকৃত-অপভ্রংশ ইত্যাদি স্তরের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষার রুপ পরিগ্রহ করছে , তাদের বলা হয় তদভব শব্দ।
যেমন :- হস্ত > হথ্থ > হাত
ভক্ত > ভত্ত > ভাত
কাষ্ঠ > কট্ঠ > কাঠ

অর্ধ-তৎসম বা ভগ্ন-তৎসম : যে সমস্ত তৎসম শব্দ বাঙালীর মুখে উচ্চারনের বিকৃতির ফলে রুপান্তর লাভ করেছে , তাদের বলা হয় অর্ধ-তৎসম বা ভগ্ন-তৎসম শব্দ।
যেমন :- কৃষ্ণ > কেষ্ট
বিষ্ণু > বিষ্টু
গ্রাম > গেরাম
প্রনাম > পেন্নাম
বৃষ্টি > বিষ্টি।

দেশী শব্দ : বাংলা দেশ আর্য-জাতির বংশধর (এবং আর্যভাষার) আগমনের পূর্বে যে জাতি বাস করতো ,তাদের কিছু শব্দ বাংলা ভাষায় স্থান গ্রহন করেছে। সেই শব্দ গুলিকে দেশী শব্দ বলে ।
যেমন :- জাব , ঝাড় , ঝিঙ্গা , কাতলা , ঢেঁকি , দোয়েল , ফিঙে ইত্যাদি।

বিদেশী শব্দ : বাংলা দেশের সঙ্গে বানিজ্যিক ,সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রীয় যোগাযোগের ফলে বহু আরবী, ফারসী , ইংরাজী , পর্তুগীজ ওলন্দাজ , চীনা , জাপানী শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করছে , বিদেশী শব্দ বলে।
যেমন :- আরবী :- জব্দ , নবাব , মুলুক, গরীব
ফারসী :- হাজার , দিল , নালিশ
ওলন্দাজ :- রুইতন , তুরুপ হরতন
ইংরাজী :- ব্যাঙ্ক , রেল , নম্বর।

মিশ্র শব্দ : তৎসম , তৎভব , দেশী ও বিদেশী শব্দের মধ্যে যে-কোন এক শ্রেণীর শব্দের সঙ্গে অপর জাতির শব্দ বা প্রত্যয়াদির যোগে যে নতুন শব্দ গঠিত হয় , তাদের শঙ্কর বা মিশ্র শব্দ বলে ।
যেমন :- হেড-মিস্ত্রি , আরাম-চেয়ার, জামাই-বাবু।

অপশব্দ: মূল ভাষার কোন শব্দ বিকৃত বা পরিবর্তিত রুপে ব্যবহার হলে তাকে অপশব্দ বলে ।
যেমন :- ভাগ্য(সংস্কৃত) > ভাইগ্ গ

খন্ডিত শব্দ যম: কোন কোন শব্দের অংশ বিশেষ বাদ দিয়ে উচ্চারিত হয় , এদের খন্ডিত শব্দ বলে।
যেমন :- ফোন < টেলিফোন, বাইক < বাইসাইকেল।

ইতর শব্দ :যে সমস্ত শব্দ মার্জিত লোকেদের কথায় ব্যবহার হয় না , তাদের বলে ইতর শব্দ ।
যেমন :- গুল-মারা , পেটো , গেঁজানো ।

বাংলা কিছু শব্দের উৎস সন্ধান

অছিলা (আগন্তুক, আরবী)
অজুহাত (আগন্তুক, ফারসী)
অঞ্জলি (তৎসম)
আইন (আগন্তুক, ফারসী)
আকাশ (তৎসম)
আকছার (আগন্তুক, আরবী)
আঙুল (আগন্তুক, ফারসী)
আচ্ছা (তদ্ভব)
আচার (আগন্তুক, পর্তুগীজ)
আজব (আগন্তুক, আরবী)
আদালত (আগন্তুক, আরবী)
আন্দাজ (আগন্তুক, ফারসী)
আনারস (আগন্তুক, পর্তুগীজ)
আলো (তদ্ভব)
আলপিন (আগন্তুক, পর্তুগীজ)
আলপনা (তদ্ভব)
আসমান (আগন্তুক, আরবি)
আসল (আগন্তুক, আরবী)
আহার (তৎসম)
ইজ্জত (আগন্তুক, আরবী)
ইমান (আগন্তুক, আরবী)
ইমারত (আগন্তুক, আরবী)

ইশারা (আগন্তুক, আরবী)
উচ্ছ্বাস (তৎসম)
উচিত (তৎসম)
ঊষা (তৎসম)
ঋণ (তৎসম)
ওজর (আগন্তুক, আরবী)
কান্না (তদ্ভব)
কামাই (আগন্তুক, ফারসী)
কামান (আগন্তুক, ফারসী)
কাষ্ঠ (তৎসম)
কিশমিশ (আগন্তুক, ফারসী)
কেনা (তদ্ভব)
কেশর (তৎসম)
কূজন (তৎসম)
কঠিন (তৎসম)
দিগন্ত (তৎসম)
কণা (তৎসম)
কন্যা (তৎসম)

আরো উদাহরণ

কর্ম (তৎসম)
কল্পনা (তৎসম)
কলমী (তদ্ভব)
কাঁচি (আগন্তুক, তুর্কী)
কাঁথা (তদ্ভব)
খারিজ (আগন্তুক, আরবী)
খালাসি (আগন্তুক, আরবী)
খাস (আগন্তুক, আরবী)
খবর (আগন্তুক, আরবী)
খরগোশ (আগন্তুক, ফারসী)
খরচ (আগন্তুক, ফারসী)
গা (তদ্ভব)
গান (তৎসম)
গীত (তৎসম)
গুঞ্জন (তৎসম)
গন্ধ (তৎসম)
গরিব (আগন্তুক, আরবী)
গহনা (তৎসম)
ঘুম (দেশি)
ঘর (তদ্ভব)
চাদর (আগন্তুক, ফারসী)
চাবি (আগন্তুক, পর্তুগীজ)
চিঠি (হিন্দি)
চেয়ার (আগন্তুক, ইংরেজী)
চোখ (তদ্ভব)

ছিরি (অর্ধ তৎসম)
ছেলে (তদ্ভব)
ছবি (আগন্তুক, আরবী)
জাহাজ (আগন্তুক, আরবী)
জোয়ান (আগন্তুক, ফারসী)
জমা (আগন্তুক, আরবী)
জল্লাদ (আগন্তুক, আরবী)
জল (তৎসম)
জুলুম (আগন্তুক, আরবী)
ঝান্ডা (আগন্তুক, হিন্দী)
ঝিলিক (দেশি)
টাকা (তদ্ভব)
টেবিল (আগন্তুক, ইংরেজী)
টোপর (দেশি)
ডাক্তার (আগন্তুক, ইংরেজী)
ডেপুটি (আগন্তুক, ইংরেজী)
ঢেলা (দেশি)
তকমা (আগন্তুক, তুর্কী)
তামাক (আগন্তুক, স্পেনীয়)
তারিখ (আগন্তুক, আরবী)
তীর (আগন্তুক, ফারসী)
তুমি (তদ্ভব)
থির (তদ্ভব)
দারোগা (আগন্তুক, তুর্কী)
দিল (আগন্তুক, ফারসী)
দীপ (তৎসম)
দেউল (তদ্ভব)
দেবালয় (তৎসম)
দেবতা (তৎসম)
দরকার (আগন্তুক, ফারসী)
দরখাস্ত (আগন্তুক, ফারসী)
দরাজ (আগন্তুক, ফারসী)

দরুন (আগন্তুক, ফারসী)
ধান (তদ্ভব)
ধরণী (তৎসম)
নকশি (আগন্তুক, আরবী)
নাস্তিক (তৎসম)
নিকেতন (তৎসম)
নিচু (তদ্ভব)
নিথর (তদ্ভব)
নির্বাসন (তৎসম)
নিলাম (আগন্তুক, পর্তুগীজ)
নীরব (তৎসম)
নীল (তৎসম)
নীলিমা (তৎসম)
নোট (আগন্তুক, ইংরেজী)
নজর (আগন্তুক, ফারসী)
নবাব (আগন্তুক, আরবী)
নমুনা (আগন্তুক, ফারসী)
নরোত্তম (তৎসম)

তথ্যসূত্র –  এসএসসি টার্গেট এসএলএসটি বাংলা

আলোচক – দীপক ঘোষ, দঃ চব্বিশ পরগণা ও   নীলরতন চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান