‘বাংলা’ উৎসকথা – সংক্ষিপ্ত আলোচনা
‘বাংলা’ উৎসকথা – একটি সংক্ষিপ্ত অথচ নিটোল এক আলোচনা । এই আলোচনায় প্রাচীন সাহিত্যের অন্দরে প্রবেশ করেছেন লেখিকা। ‘বাংলা’ শব্দের প্রাচীন ব্যবহার করে কোন রচনায় ব্যবহৃত হয়েছে এ সম্পর্কে তথ্য পাবেন পাঠক পাঠিকা।
“মোদের গরব মোদের আশা
আ মরি বাংলা ভাষা! “
বাংলা শব্দের ব্যবহার ও প্রাচীন সাহিত্য
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম লেখ্য নিদর্শন চর্যাগীতি।বাংলা ভাষায় যারা কথা বলে তারা বাঙালী নামে পরিচিত।বাঙালীরা যে অঞ্চলে বসবাস করে তার নাম বাংলাদেশ বা বঙ্গদেশ।আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব আড়াই হাজার অব্দে এশিয়া, ইউরোপ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আর্যজাতির আগমন ঘটে ভারতবর্ষে।এদেশে অবস্থিত অস্ট্রিক, কোল, সাঁওতাল, মুন্ডা, শবর, পুলিন্দ, হো, কুর্ক, ডোম, চন্ডালের সাথে মিশে যে মিশ্রজাতি ও ভাষার জন্ম হয় তা বাঙালী জাতি ও বাংলা ভাষা।
ভূখন্ড হিসাবে ‘বঙ্গ’ শব্দটি প্রথম মেলে খ্রী: পূ: ২য় শতকে পতঞ্জলির মহাভাষ্যে।এখানে অঙ্গ, বঙ্গ ও সুহ্ম-এর উল্লেখ আছে আছে।অঙ্গ=বিহার, ঝাড়খন্ড ও বাংলার কিছু অংশ।বঙ্গ=বঙ্গদেশের অবিভক্ত জলময় অঞ্চল।সুহ্ম=বীরভূম, বর্ধমান।
খ্রীষ্টীয় নবম-দশম শতকে পশ্চিম বাংলার নাম সুহ্ম থেকে পরিবর্তিত হয়ে ‘রাঢ়’ হয়। রাঢ়-এর দুটো ভাগ।যথা উত্তর রাঢ় ও দক্ষিণ রাঢ়।
উত্তর রাঢ় অজয় দামোদরের উত্তর দিক নিয়ে গঠিত। দক্ষিণ রাঢ় অজয়ের পূর্বদিক ও দামোদরের দক্ষিণ-পূর্ব দিক নিয়ে গঠিত।তখনকার দিনে রাজারা তাদের রাজস্ব আদায়ের জন্য এই ভাবে নদীকে কেন্দ্র করে ভূভাগ করে নিত।
ঋকবেদে ‘বঙ্গ’ শব্দের উল্লেখ নেই।’বঙ্গ’ শব্দের প্রথম পরিচয় মেলে ঐতরেয় আরন্যকে।
বঙ্গ > বঙ্গাল (বঙ্গ+আল) অথবা (বঙ্গ+পাল) শব্দটির উৎপত্তি বলে ধরা হয়।কোসাম্বীর এক গুহালিপি থেকে জানা যায় যে অধিচ্ছত্রার রাজা ‘বঙ্গপাল’ এর পুত্র আষাঢ় সেন এই লিপি উৎসর্গ করেছেন।
সুহ্ম শব্দটি পতঞ্জলির মহাভাষ্য ও বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মশাস্ত্রে রয়েছে।
রাঢ় শব্দটি ষোড়শ শতকের কবিকঙ্কণ মুকুন্দের ‘চন্ডীমঙ্গল’ এ আছে।
প্রাচীন বাংলার আরেকটি নাম গৌড় ছিল।গৌড় ও বঙ্গ আধুনিক রামমোহন, রবীন্দ্রনাথ, মধুসূদন ব্যবহার করেছেন।যেমন রামমোহনের “গৌড়ীয় ব্যকরণ”, মধুসূদনের “বঙ্গভূমির প্রতি”।
বাংলা ভাষায় ঠিক কবে থেকে সাহিত্য চর্চা শুরু হয়েছে বলা মুসকিল।তবে আনুমানিক শ্রীকর নন্দী ষোড়শ শতকের প্রথমার্ধে মহাভারতের অনুবাদ তাঁর মাত়ভাষা অর্থাৎ ‘দেশি’ বাংলা ভাষায় করেছেন।তার আগে সংস্কৃত-পালি-প্রাকৃত-অর্ধপ্রাকৃত-অবহঠ্ট ভাষার ব্যবহার ছিল।এর নিদর্শন ‘বেদ’, খ্রী:পূ: সপ্তম-চতুর্থ শতকে পানিণির ব্যকরণ, জাতক, ‘অবদান’-র গ্রন্থ।অপভ্রংশ ও অবহঠ্ট ভাষায় কীর্তিলতা, কীর্তিপতাকা।প্রাচীন বাংলা ভাষা ‘চর্য্যাগীতিকোষ’-এ।
বাঙালী রচিত অবাংলা সাহিত্য ও বিদ্যমান। যেমন সুভাষিত রত্নকোষ, সদুক্তিকর্ণামৃত, গীতগোবিন্দ।