নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৭ ই জুলাই, ১৮৬৩ – ১৭ ই মে, ১৯১৩) বাংলা নাট্যসাহিত্যের একজন উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ত্ব। পড়াশোনার সুবাদে তিনি বিলেত যান এবং পাশ্চাত্য নাট্যসাহিত্য ও নাট্যাভিনয়ের সঙ্গে বিশেষভাবে পরিচিত হন। বাংলা সাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় আবির্ভূত হন প্রহসনকার হিসাবে। তারপর তিনি যথার্থ নাটক লিখে বাংলা ও বাংলার বাইরে জনপ্রিয় নাট্যকার রূপে সম্মান লাভ করেন।
দ্বিজেন্দ্রলাল কে ‘হাসির গানের রাজা’ বলা হয়। হাসির সঙ্গে সামাজিক বিষয়ের ব্যঙ্গ ও ধিক্কার মিলেমিশে তাঁর মনের মধ্যে এমন একটা জগৎ সৃষ্টি করল যা তাকে প্রহসন লেখায় প্রেরণা দিল। ‘একঘর’ প্রহসনে রস ঠিক মতো জমে না ওঠায় ‘কল্কি অবতার’কে অনেকে দ্বিজেন্দ্রলালের প্রথম প্রহসন বলে অভিহিত করে থাকেন। ‘ত্রহস্পর্শ’ বিবাহ বিভ্রাটকে কেন্দ্র করে লেখা। প্রায়শ্চিত্ত :- বিলাত ফেরত সমাজের আচার-আচরণকে ব্যঙ্গ করে লেখা। তাঁর ‘আনন্দবিদায়’ রবীন্দ্রনাথকে আক্রমন করে লেখা।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটক
প্রহসন – একঘরে (১৮৮৯) কল্কি অবতার (১৮৯৫) বিরহ (১৮৯৭) ত্রহস্পর্শ / সুখী পরিবার (১৯০০) প্রায়শ্চিত্ত (১৯০২) পুনর্জন্ম (১৯১১)
ইতিহাসাশ্রয়ী নাটক – তারাবাঈ (১৯০৩) প্রতাপসিংহ (১৯০৫) দুর্গাদাস (১৯০৬) সোরাব রুস্তম (১৯০৮) নূরজাহান (১৯০৮) মেবার পতন (১৯০৮) সাজাহান (১৯০৯) চন্দ্রগুপ্ত (১৯১১) সিংহল বিজয় (১৯১৫)
পৌরাণিক নাটক – পাষাণী (১৯০০) সীতা (১৯০৮) ভীষ্ম( ১৯১৪)
সামাজিক নাটক – পরপারে (১৯১২) বঙ্গনারী (১৯১৫) প্রভৃতি।
ইতিহাসাশ্রয়ী নাটকগুলির মধ্যে দ্বিজেন্দ্রলালের নাট্যপ্রতিভার গভীর ছাপ পরিলক্ষিত হয়। প্রতাপসিংহ, দুর্গাদাস, নূরজাহান, মেবার পতন, সাজাহান তাঁর সুপ্রসিদ্ধ নাটক। রাজপুত বীরত্ব ও মুঘল যুগের কাহিনিগুলিকে তিনি অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে নাটকীয়তা সৃষ্টি করেছেন। ‘দুর্গাদাস’ ও ‘মেবার পতন’ টডের ‘অ্যানালস অ্যান্ড অ্যান্টিকুইটি অফ রাজস্থান’কে কেন্দ্র করে লেখা। দ্বিজেন্দ্রলালের প্রথম পৌরাণিক নাটক হল – পাষাণী। পৌরাণিক নাটক মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল সীতা। রামায়ণের উত্তরা কান্ডের বিষয়কে কেন্দ্র করে এই নাটকটি রচিত। সামাজিক নাটকে তিনি খুব একটা সফল হননি। তবে “বঙ্গনারী” নাটকে পণপ্রথা ও বাল্যবিবাহ সমস্যা গুরুত্ব লাভ করেছে।
অন্যান্য তথ্য
- দ্বিজেন্দ্রলালের মৃত্যুর পরে প্রকাশিত নাটিক হল -“সিংহল বিজয়”।
- দ্বিজেন্দ্র জীবনীকার হলেন – দেবকুমার রায়চৌধুরী।
নাটকের চরিত্র-চিত্রণরীতি, মানসিক দ্বন্দ্ব প্রভৃতিতে শেকসপিরীয় রীতি অনুসরন দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু আবেগ এবং উত্তপ্ত বাগধারা ভাষারীতির উত্থান পতন, কাব্যধর্মী সংলাপে জার্মান নাট্যকার শীলারের প্রভাব দেখা যায়। বাংলা নাট্যসাহিত্যে আধুনিকতার উত্তরণে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান অনস্বীকার্য।