অন্যান্য সাহিত্যিক

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় – কিছু জানা, কিছু অজানা

অসাধারন পান্ডিত্যের অধিকারী,প্রাবন্ধিক,সমালোচক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় গভীর ভুয়োদর্শনের অধিকারী ছিলেন। বিশিষ্ট ভাষাবিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষণী প্রতিভার পরিচায়ক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ১৮৯০ খ্রীস্টাব্দে ২৬শে নভেম্বর হাওড়া জেলায় শিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

পিতা হরিদাস চট্টোপাধ্যায় ও মাতা কাত্যায়নী দেবীর এই সুপুত্র পরবর্তীকালে হয়ে ওঠেন খ্যাতনামা ভাষাতত্ববিদ এবং জাতীয় অধ্যাপক। তাঁর শিক্ষার পথ সুগম ছিলনা। কষ্ট ও অধ্যবসায়ের মধ্যদিয়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর করেন।১৯০৭ সালে মতিলাল শীল ফ্রী স্কুল থেকে বৃত্তি সমেত উত্তীর্ন হয়ে স্কটিশচার্চ কলেজে ভর্তি হন। তারপর ১৯১১সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি. এ পাশ করেন। ১৯১৪ সালে ইংরেজী বিষয়ে এম.এ পাশ করেন।তারপর লন্ডনে তিনি ফোনেটিক্স ধ্বনিতত্ব,ইন্দো ইউরোপিয়ান লিঙ্গুয়িস্টিক,ফরাসি সাহিত্য,পুরাতন আইরিশ,ইংলিশ,আবেস্তা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করেন। পরবর্তীকালে প্যারিসে সারবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হিসেবে যোগ দিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন ভাষাতত্ত্ব, স্লাভ ও ইউরোপিয়ান ভাষাতত্ত্ব, গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষার ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণা করেন।

১৯১৪ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক পদ অলংকৃত করেন। ১৯২২সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাকে ভারতীয় ভাষাতত্ত্বের প্রথম ‘খয়রা’ অধ্যাপক নিয়োজিত করেন। ১৯৫২সালে তিনি এমেরিটাস অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৯৫২-১৯৬৮ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ পরিষদের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ‘An Historical Comparative Grammar Of The Bengali Language’ নামক গবেষণা পত্র লিখে ‘প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ ‘ বৃত্তি ও জুবিলী বৃত্তি লাভ করেন।

১৯২৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সুমাত্রা,জাভা,বোর্ণিয়া প্রভৃতি বিভিন্ন দেশে ভারতের সংস্কৃতি ও শিল্প সাহিত্য বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। এই প্রসঙ্গে তিনি রচনা করেন ‘রবীন্দ্রসংগমে দ্বীপময় ভারত ও শ্যামদেশ’ (১৯৬৫)। ১৯৩৫সালে লন্ডনের কনফারেন্স অফ ফোনেটিক্স সায়েন্সের দ্বিতীয় অধিবেশনে যোগ দেন। ১৯৩৬সালে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির ফেল নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালে করাচিতে হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনে তাকে হিন্দি ভাষায় অবদানের জন্য ‘সাহিত্য বাচস্পতি’ উপাধী প্রদান করে। ১৯৫১সালে ‘ব্রেইল অক্ষর ‘ কমিটিতে যোগ দিতে প্যারিসে যান। ১৯৫৫সালে অসলোর নরওয়েজিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্স তাকে ‘অনারারি’সদস্য নির্বাচিত করে।সোভিয়েত একাডেমি অফ সায়েন্স সহ নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে আমন্ত্রিত হয়ে তার বক্তব্য রাখেন। ১৯৬৩ সালে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধী প্রদান করে। ১৯৬৬সালে তিনি জাতীয় অধ্যাপক উপাধী তে ভূষিত হন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার মনীষার জন্য তাঁকে ‘ভাষাচার্য্য’ উপাধী দেন।
তিনি তার সারা জীবনে প্রায় ৩৮০ টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। সেগুলি নিম্নরূপ >

‘বাংলা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা’-১৯১৯
0. B.D. L-১৯২৬
‘জাতি সংস্কৃতি ও সাহিত্য’-১৯৩৮
‘পশ্চিমের যাত্রী’-১৯৩৮
‘ভাষা প্রকাশ ও বাঙ্গালা ব্যাকরণ’-১৯৩৯
‘ভারতের ভাষা ও ভাষা সমস্যা’-১৯৪৪
‘ভারত সংস্কৃতি’-১৯৪৪
‘বৈদেশিকী’-১৯৪৭
বাংলা ভাষা প্রসঙ্গে’-১৯৭৫
সংস্কৃতি শিল্প ইতিহাস’-১৯৭৬
‘বাঙালির সংস্কৃতি’-১৯৯০
তার বিভিন্ন ইংরেজি তে লেখা গ্রন্থ গুলি হলো-
”Bengali self taught’-১৯২৭
‘A bengali phonetic Reader’-১৯২৮
‘IndoAryan and Hindi’-১৯৪২
‘On the Development of Middle Indo Aryan’-১৯৮৩
মূলত ও সতত ভাষাবিজ্ঞানী বলে পরিচিত হলেও ছড়া,গান,চিত্রকলা,নৃতত্ত্ব,পুরাতত্ত্ব,সমাজবিদ্যা,ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে সমান আগ্রহ ও একনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির অতুলনীয় দাবিদার এই ব্যাক্তিত্ব ১৯৭০সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

আলোচনায় – সুমনা সাহু, বাংলা ছাত্রী, কলকাতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *